Search This Blog ( এই ব্লগটি অনুসন্ধান করুন )

Monday, 29 April 2019

বাংলার শেষ নবাব নাজিম ফেরাদুন জাঁ।


@ ঐতিহাসিক হাজারদুয়ারী প্রাসাদের দরবার গৃহে পারিষদবর্গ সহ শেষ নবাব নাজিম ফেরাদুন জাঁ। ১৮৪৭ খ্রীষ্টাব্দের ২১ শে মে।

Saturday, 27 April 2019

কাশিমবাজার ছোটো রাজবাড়ী।


@ এক সময় জগদ্বিখ্যাত বন্দর কাশিমবাজার ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল সমৃদ্ধ হয়েছিল যে সকল রাজ পরিবারের দ্বারা, সেই সকল রাজ পরিবারের মধ্যে অন্যতম ছিল অযোধ্যারাম রায় এর পরিবার। যিনি ছিলেন কাশিমবাজার ছোটো রাজবাড়ীর প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীতে ১৮৭৮ খ্রীষ্টাব্দে পিতা অন্নদাপ্রসাদ রায়বাহাদুরের অকাল প্রয়াণে এই পরিবারের সপ্তম পুরুষ রাজা আশুতোষ নাথ রায় সমস্ত বিষয় সম্পত্তির মালিক হন। কিন্তু সেই সময় তিনি মাত্র ৪ বছর বয়সের বালক।স্বাভাবিক ভাবেই আইন মোতাবেক তার সকল সম্পত্তি " কোর্ট অব ওয়ার্ডস " এর অধীনে রক্ষিত হয়। অবশেষে তিনি বয়ঃপ্রাপ্ত হলে ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে ১ লা মে তারিখে ভারতের তদানিন্তন ভাইসরয় এবং গভর্ণর জেনারেল তাকে রাজা উপাধিতে ভূষিত করে সম্মানীয় " সনদ " প্রদান করেন। এই আনন্দঘন মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কাশিমবাজার ছোটো রাজবাড়ীতে। মুর্শিদাবাদের অনেক খ্যাতিমান রাজপুরুষ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানের শোভা বর্ধন করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে ধারণকৃত একটি আলোকচিত্রেই আজকের এই আলোকপাত। (১) রাজা আশুতোষ নাথ রায়। (২) রাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী ( কাশিমবাজার বড়ো রাজবাড়ী )। (৩) মুর্শিদাবাদের ভাবি নবাব বাহাদুর স্যার ওয়াসিফ আলী মির্জা। (৪) মুর্শিদাবাদের প্রথম নবাব বাহাদুর হাসান আলী মির্জার দেওয়ান ফজলে রব্বী। 

লেখা : Anindya Sarkar.

Thursday, 18 April 2019

ঐতিহ্যবাহী দশ শিব মন্দির.......


@ ঐতিহ্যবাহী দশ শিব মন্দির......
কাশিমবাজার।
মুর্শিদাবাদ।

👉 আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে এই মুর্শিদাবাদের মাটিতেই গঙ্গা নদীর একটি অশ্বক্ষুরাকৃতি বাঁকের অংশে এক অখ্যাত নদী বন্দরের পথ চলা শুরু হয়েছিল । অল্পদিনেই নিজ যোগ্যতায় সে ধারণ করে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। সেই কাশিমবাজার বন্দর পরবর্তীতে প্রায় ২০০ বছর ধরে বিশ্বের দরবারে নিজের গৌরবগাঁথা বিঘোষিত করে। ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বণিকগণ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে  তখন পাড়ি জমান এই কাশিমবাজারের উদ্দেশ্যে। একে একে এখানে এসে উপস্থিত হন আর্মেনিয়ান, ডাচ,  ফরাসি ও ব্রিটিশদের মতন  বিদেশী বণিকেরা। আস্তে আস্তে  অসংখ্য দেশীয় বণিকদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই কাশিমবাজার। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পিতৃপুরুষের ভিটে মাটির মায়া ত্যাগ করে, এই জেলার ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত পিরোজপুর গ্রাম ছেড়ে কাশিমবাজারে চলে আসেন জনৈক অযোধ্যারাম রায়। তখন বিশ্বের দরবারে এক জমজমাট বানিজ্য কেন্দ্র হিসেবে কাশিমবাজারের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতছানি তিনি হেলায় অস্বীকার করতে পারেননি। কাশিমবাজার ছোটো রাজবাড়ীর যে পত্তন এই অযোধ্যারাম রায় এর হাতে শুরু হয় তা পরবর্তীতে একসময় উন্নতির চরমে ওঠে। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন  স্থাপত্য গড়ে উঠে এই রাজবাড়ীর বংশধরদের পৃষ্ঠপোষকতায়। কাশিমবাজার ছোটো রাজবাড়ীর সামান্য উত্তরে অবস্থিত দশ শিব মন্দির তেমনই এক স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। তৎকালীন গঙ্গা বা বর্তমান কাটি গঙ্গার পাশেই মন্দিরগুলি নির্মিত হয়েছিল বিভিন্ন সময় এই রাজবাড়ীর বিভিন্ন বংশধরদের দ্বারা। তবে অনেকে মনে করেন ধর্মপরায়ণা রাণী আর্নাকালী দেবীই এই দশ শিব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। অতীতে তিন দিকে প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল এই মন্দির গুচ্ছ, যে প্রাচীরের আজকে কোনো অস্তিত্বই নেই। এই দশ শিব বাড়ির প্রশস্ত অঙ্গনে প্রবেশ করার জন্য পশ্চিমদিকের প্রাচীরে একটি প্রবেশদ্বার আছে। প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করেই বামদিকে অর্থাৎ উত্তরদিকে প্রাচীরের গা ছোঁয়া পূর্ব মুখি দুটি শিব মন্দির চোখে পড়ে। এই প্রথম মন্দিরের ইষ্ট দেবতার নাম “ ভৈরব নাথ “। পূর্ব মুখি উত্তর – দক্ষিণে বিস্তৃত উত্তর দিক থেকে দ্বিতীয় মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ বিশ্বনাথ “। যথাক্রমে পূর্ব মুখি তৃতীয় মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ বৈদ্যনাথ “। পূর্ব মুখি  চতুর্থ মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ সোমনাথ “। পূর্ব মুখি পঞ্চম মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ রামেশ্বর নাথ “।  এছাড়া অঙ্গনের দক্ষিণ দিকে প্রাচীরের প্রায় গা ছোঁয়া পাশাপাশি উত্তর মুখি আরও পাঁচটি মন্দির আছে। এই পাঁচটি মন্দিরের মধ্যে পশ্চিম দিক থেকে উত্তর মুখি প্রথম মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ তারকনাথ “। যযথাক্রমে উত্তর মুখি দ্বিতীয় মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ ত্রম্বকনাথ “। পরবর্তী অর্থাৎ তৃতীয় উত্তর মুখি মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ অমর নাথ “।  চতুর্থ উত্তর মুখি মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ কেদারনাথ “। এই সারির শেষ অর্থাৎ পঞ্চম উত্তর মুখি মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ সারনাথ “। এই মন্দির গুলি  সমষ্টিগত ভাবে ইংরেজি  এলফাবেট  (  L )  অক্ষরের সৃষ্টি করেছে। শোনা যায়,  পূর্বে প্রতিদিন পাঁচ পোয়া আতপ চালের অন্নভোগ হত। তার সঙ্গে থাকত দশটি কাঁচা মিষ্টি এবং দশটি পাকা কলা।  কাঁসর ঘন্টা বাজিয়ে সন্ধ্যায় হতো সন্ধ্যারতি। সেকালে দেবতার উদ্দেশ্যে যে ভোগ হতো তাকে বলা হতো  “ দান “। শিবরাত্রির সময় এখানকার স্থানীয় মানুষজন মহাধুমধামে এখনও শিব রাত্রির উৎসব পালন করেন। কাশিমবাজারের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য গুলির মধ্যে এই দশ শিব মন্দির অন্যতম যা সময়ের সাথে যুদ্ধে আজও বিজয়ী.......

লেখা : Anindya Sarkar.

বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসে এই ক্ষুদ্র নিবেদন।

Tuesday, 16 April 2019

মুর্শিদাবাদ জেলার শিক্ষা প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন শ্রী শ্রীপৎ সিং দূগড়।




@ দিগন্ত বিস্তৃত শস্য শ্যামলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ইতিহাসের সোঁদা গন্ধের টানে অসংখ্য পর্যটক এই মুর্শিদাবাদে ভ্রমণে আসেন। এই জেলার আনাচে কানাচে এখনও ফিসফিস করে যেন ইতিহাস কথা বলে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ইতিহাসের অপূর্ব মেলবন্ধন এই ঐতিহাসিক জেলা। ঐতিহাসিক সাগরদীঘি, দিগ্বিজয়ী রাজা শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ, মহীপাল ইত্যাদি অসংখ্য মূল্যবান ঐতিহাসিক স্থান এই জেলাতেই অবস্থিত। এছাড়াও নবাবদের স্মৃতি বিজড়িত শহর মুর্শিদাবাদ ও অষ্টাদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত জৈন ধর্মাবলম্বীদের আবাসস্থল জিয়াগঞ্জ - আজিমগঞ্জের প্রতিটি অলিতে-গলিতে যেন ইতিহাস আজও কথা বলে। সময়ের অভাবে পর্যটকেরা হয়ত সব জায়গায় পৌঁছাতে পারেন না ঠিকই, তবুও হাজারদুয়ারীর পাশাপাশি কাঠগোলা প্রাসাদ বা বাগানবাড়ী ঘুরে দেখেন নি এমন পর্যটক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই কাঠগোলা বাগানবাড়ীর অপরূপ সৌন্দর্য্য আজও আপামর বাঙালিকে মোহিত করে। এছাড়াও এই বাগানবাড়ীর নির্মাতা লক্ষীপৎ সিং দূগড় এর উত্তর পুরুষ শ্রী শ্রীপৎ সিং দূগড় এর অকৃপণ দান জেলার শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাসে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। জেলার অসংখ্য যুবক, যুবতী তাদের শিক্ষা জীবনের মূল্যবান কয়েক বছর সময় অতিবাহিত করেছেন " শ্রীপৎ সিং কলেজ " এ , কিন্তু অনেকেই হয়ত জানেন না যে শ্রীপৎ সিং দূগড় কেমন দেখতে ছিলেন। এছাড়াও এই জেলার শিক্ষাব্যবস্থায় তার অবদানের কথা অনেকেই অবগত নন।  এখানে উল্লিখিত ছবিগুলি যথাক্রমে শ্রী শ্রীপৎ সিং দূগড় ( যখন তার বয়স ৭০ বছর), সস্ত্রীক শ্রী শ্রীপৎ সিং দূগড়, শ্রীপৎ সিিং কলেজের প্রবেশপথ ও কাঠগোলা প্রাসাদ। 

লেখা : Anindya Sarkar.

Sunday, 14 April 2019

মুর্শিদাবাদের নবাবি কেল্লার সেকাল ও একাল।







@ ১৭০৪ খ্রীষ্টাব্দে মুর্শিদাবাদ নগরীর পত্তন করে এখানে নিজের দেওয়ানি কার্যালয় স্থাপন করেন দেওয়ান করতলব খাঁ। মুর্শিদাবাদ নগরীর পত্তনের আগেও এই শহরের অস্তিত্ব ছিল, তবে তা অন্য নামে বা অন্য পরিচয়ে। সেটা ছিল অপেক্ষাকৃত ছোটো একটা শহর " মুখসুদাবাদ "। পূর্বতন সুবেদার আজীমুসসানের রাজত্বকালে মুখসুদাবাদের ফৌজদার জনৈক " বলদেব রায় " বসবাস করতেন এই শহরেই। পরবর্তীতে ১৭১৭ খ্রীষ্টাব্দে নবাব মুর্শিদকুলী খানের দৌলতে এই ছোট্ট শহর নিজ মস্তিষ্কে ধারণ করে রত্নখচিত প্রাদেশিক রাজধানীর মুকুট। যা আগামীতে প্রায় ৬০ বছর ধরে বিশ্বের দরবারে নিজের গৌরবগাঁথা বিঘোষিত করে। ১৭০৪ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৭১৭ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত এই সময়কালে দেওয়ান করতলব খাঁ বা মুর্শিদকুলী খানকে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং ১৭১৭ খ্রীষ্টাব্দে তিনি এই সুবার দেওয়ান ও সুবেদার নিযুক্ত হন। অতঃপর তিনিই হয়ে ওঠেন এই সুবার সর্বময় কর্তা। সুবেদারের পরিবারের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে এই শহরেই শুরু হল দূর্গ নির্মাণের কাজ যা পরবর্তী নবাব সুজাউদ্দৌলার রাজত্বকালে বৈভবের আর এক নাম হয়ে উঠল । অনেক প্রাসাদ ও ভবন গড়ে উঠল এই কেল্লার মধ্যস্থিত এলাকায়, যেমন - দেওয়ান-ই-খাস বা প্রাইভেট হল, ম্যামো হাউস, রুহু আফজা, মহল সরাই, মতিমহল, সোনা মহল, চাঁদি মহল, এমতিয়াজ মহল, আয়না মহল, বেগম মহল ইত্যাদি। এই সমস্ত স্থাপত্য গুলো ইন্দো পারসিক স্থাপত্য রীতি অনুযায়ী গড়ে উঠল । এছাড়াও কেল্লায় প্রবেশের জন্য নহবতখানা সহ কয়েকটি বৃহৎ প্রবেশদ্বার গড়ে উঠল, এর মধ্যে অনেকে স্থাপত্যই আজকে অতীতের স্মৃতি মাত্র । প্রবেশদ্বার গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ত্রিপোলিয়া প্রবেশদ্বার ও দক্ষিণ দরওয়াজা । আজকের বিষয় সেই ঐতিহাসিক দক্ষিণ দরওয়াজা। বিভিন্ন সময়কালে কেমন ছিল সেই বিখ্যাত দক্ষিণ দরওয়াজা ?

লেখা : Anindya Sarkar.

Thursday, 11 April 2019

হাজারদুয়ারীর একাল ও সেকাল




নবাবি আমলের বড়োকুঠী বা হাল আমলের হাজারদুয়ারী, যে নামেই ডাকা হোক না কেন তা মুর্শিদাবাদে ভ্রমণরত সকল ভ্রমনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ। এখানে সংরক্ষিত বিভিন্ন মূল্যবান ঐতিহাসিক প্রত্নসম্পদ এই সংগ্রহশালাকে পৃথিবীর মঞ্চে শ্রেষ্ঠ আসনে স্থাপিত করেছে। যা পৃথিবীর যে কোনো সংগ্রহশালার ঈর্ষার কারণ। কিন্তু এখানে ভ্রমণরত পর্যটকদের কৌতূহলী মনের অনেক প্রশ্ন, প্রশ্নই রয়ে যায়। এরপর তারা বাড়ি ফিরে যান এই অজস্র প্রশ্নের কিছু ধোঁয়াশা ভরা উত্তর নিয়েই। যেমন, কেমন ছিলো এই প্রাসাদে বসবাসকারী নবাবদের বিভিন্ন অলংকার ও ব্যবহারকৃত বিভিন্ন উপকরণ। নবাবদের ব্যবহারকৃত বিভিন্ন উপকরণ হয়তো এই সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে ঠিকই, কিন্তু কোনো অলংকার নেই। বিখ্যাত ঐতিহাসিক শ্রী পূর্ণ চন্দ্র মজুমদার তার " Tha Musnud of Murshidabad " গ্রন্থে এমনই একটি অলংকারের ছবি প্রকাশ করেছিলেন। এই বিখ্যাত ছবিই আজকের বিষয়। উক্ত ছবিতে অলংকারের পাশাপাশি কয়েকটি তরবারী দেখা যাচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নবাব মীরজাফরের ব্যবহৃত একটি তরবারী। যেটি ছবির একেবারে বাম পাশে আছে এবং উক্ত তরবারীর হাতলটি সম্পূর্ণ হাতির দাঁতে তৈরী । এছাড়াও উক্ত হাতলে সোনার জালির কারুকার্য চোখে পড়ে। তবে উক্ত তরবারীটি দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এই তরবারীটি বর্তমানে কোলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে সযত্নে সংরক্ষণ করা আছে।
তথ্য সংগ্রহ ও লেখা : Anindya Sarkar. 

Saturday, 6 April 2019

মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর স্যার ওয়াসিফ আলী মির্জা খান বাহাদুর।


This picture is very valuable from the historical perspective. A Nawabi Fiton car visible in this picture. 2nd Nawab Bahadur of Murshidabad Sir Wasif Ali Mirza is sitting in the Fiton car.

Wednesday, 27 March 2019

রাজা কীর্তিচাঁদ বাহাদুরের অমর কীর্তি নশিপুর রাজবাড়ী।




মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য স্থান সমূহের মধ্যে নশিপুর রাজবাড়ী অন্যতম। মুর্শিদাবাদ ( লালবাগ ) শহরের প্রধান আকর্ষন হাজারদুয়ারী প্রাসাদ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে এই নশিপুর রাজবাড়ী অবস্থিত। আজকের দিনে রাজবাড়ীর সমস্তটাই ঝাঁ চকচকে হলেও বিগত কয়েক বছর আগেও এমন ছিল না। নতুন আলোকে এই রাজবাড়ীকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরার সম্পূর্ণ কৃতিত্বই রাজবাড়ীর বর্তমান বংশধর সৌরেন্দ্রমোহন সিংহ ও স্থানীয় পাঁচজন যুবকের। অবলুপ্তির হাত থেকে ঐতিহাসিক নশিপুর রাজবাড়ি রক্ষার দায়িত্ব তারা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বলে মুর্শিদাবাদের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য রক্ষা করা সম্ভবপর হয়েছে। এছাড়াও নবাব বাহাদুর স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক চিত্রশিল্পী পঞ্চানন বাবুর অবদান একবাক্যে স্বীকার করতে হয়। তার শৈল্পিক হাতের যাদুতে এই রাজবাড়ী পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। ইতিহাসের পাতায় কিন্তু এই বাড়ি অত্যাচারি দেবী সিংহের বাড়ি নামে খ্যাত। দেবী সিংহ ছিলেন বৃটিশ অধীন বাংলার রাজস্ব বিভাগের একজন দেওয়ান। তার অত্যাচারে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তিনি ইংরেজ কোম্পানির আশীর্বাদপুষ্ট হন। অতঃপর প্রচুর ধনসম্পদ করায়ত্ত হওয়ায় তিনি জমিদারী ক্রয় করেন। তবে দ্বিতীয় হাজারদুয়ারী হিসেবে পরিচিত এই নশিপুর রাজবাড়ী কিন্তু দেবী সিংহের দ্বারা তৈরি নয়। দেবী সিংহের উত্তরপুরুষ রাজা কীর্তি চাঁদ বাহাদুর ১৮৫৬ খ্রীস্টাব্দে হাজারদুয়ারী প্রাসাদের অনুকরণে এই রাজবাড়ী তৈরী করেন যা গর্বের পালক হয়ে আজও শোভা পাচ্ছে ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ শহরের মুকুটে।

লেখা : অনিন্দ্য সরকার। 
Picture source : The current descendants of King Devi Sing.


Saturday, 16 March 2019

ঐতিহাসিক কাঠগোলা প্রাসাদে শ্রীপত সিংহ দূগড় ।


💢১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ পদাধিকারী মিস্টার আর. এম. রাইট্ মুর্শিদাবাদ ভ্রমণে এসেছিলেন । সেই উপলক্ষ্যে শ্রীপত সিংহ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী শ্রীপত সিংহ দূগড় একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন নিজের বাগানবাড়ি কাঠগোলা প্রাসাদে । উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন অনেক সম্মানীয় অতিথিগণ । সেই উপলক্ষ্যে কাঠগোলা প্রাসাদের সামনে ধারণ করা এই ঐতিহাসিক ও মূল্যবান ছবি।

ছবি : প্রথম সারিতে বসে আছেন , বাম দিক থেকে তৃতীয় - শ্রী শ্রীপত সিংহ দূগড়, চতুর্থ - মিস্টার আর. এম. রাইট্ ও সপ্তম বা শেষ - আজিমগেঞ্জর জমিদার নির্মল কুমার সিংহ নওলক্ষা।

Tuesday, 12 March 2019

মসনদ-ই-সুবে বাংলা



👉 " মসনদ - ই - সুবে বাংলা " , যার অর্থ সুবে বাংলার মসনদ বা সিংহাসন । নিকষ কালো পাথরের এই " মসনদ - ই - সুবে বাংলার " জন্মবৃত্তান্ত খোদাই করা আছে তার শরীরে । কেটে কেটে ছয় ফুট ব্যাসের একটি খণ্ডে পরিনত করা নিকষ কালো পাথর । ধারগুলি ষোলোটি পলে ভাগ করা । আঠারো ইঞ্চি উচ্চতার চারটে ভারী স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত এই পাথর ই "মসনদ - ই - সুবে বাংলা" ।

ষোলো পলের এক পলে যা খোদাই করা আছে তার অর্থ এই রকম ------ শুভলক্ষনময় এই মসনদ তৈরী করা হলো বিহারের মুঙ্গেরে , বোখারার দাসানুদাস খাজা নজর কর্তৃক শ্রাবন মাসের ২৭ তারিখ । হিজরি ১০৫২ , মহামান্য বাদশাহ শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র সুলতান শাহসুজা , যিনি সুবে বাংলার সুবেদার ছিলেন , তাঁর আমলে । ধারগুলিতে কয়েকটি গর্ত আছে , উপরে চাঁদোয়া ধরে রাখার জন্য । মসনদের এই চাঁদোয়া ধরে রাখার ইতিহাস আর নবাবদের ভাগ্যের ইতিহাস একই । ১৬৪৩ সাল থেকে শাহসুজা মসনদে আসীন ছিলেন । ১৬৫৭ সালে বাদশাহ শাহজাহান অসুস্থ হয়েছেন রটে গেলে , রাজমহলে এই মসনদে বসেই তাঁর দ্বিতীয় পুত্র শাহসুজা নিজেকে দিল্লির বাদশাহ বলে ঘোষনা করেন । কিন্তু তারপরেই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় । দিল্লিতে আওরঙজেব নিজেকে বাদশাহ ঘোষনা করে বিশাল সেনাবাহিনী সমেত মীর জুমলাকে পাঠান শাহসুজাকে দমন করতে । মীর জুমলা তার পশ্চাদ্ধাবন করেন । শাহসুজা মাসুমা বাজারের কাছে তাঁবু খাটিয়ে বাদশাহি বাহিনীর গতিরোধ করার চেষ্টা করেন । বাদশাহি বাহিনীকে প্রথমে ধুলিয়ানের কাছে দোগাছি , তারপর দেওনাপুর , তারপর সুতি , অবশেষে নশীপুরে নদিপথে বাধা দেন । সব জায়গায় অকৃতকার্য হয়ে তারপর জঙ্গিপুরের উপকণ্ঠে বালিঘাটা নামক জায়গায় সামনাসামনি যুদ্ধে নামেন । যুদ্ধে পরাজিত হয়ে প্রথমে ঢাকা পরে আরাকানে পালিয়ে যান ।

অতঃপর সুবেদার পদে অধিষ্ঠিত হন মীর জুমলা (১৬৬০-১৬৬৩) । মীর জুমলার পরে সুবেদার হন দাউদ খান (১৬৬৩-১৬৬৪) , শায়েস্তা খান (১৬৬৪-১৬৭৮) , ফিদাই খান (১৬৭৮) , আবার শায়েস্তা খান (১৬৭৯-১৬৮৮) , খান-ই-জাহান (১৬৮৮-১৬৮৯) , ইব্রাহিম খান (১৬৮৯-১৬৯৭) , শাহজাদা আজিম উসসান (১৬৯৭-১৭০৪) , মুর্শিদকুলিখান (১৭০৪-১৭২৫) , সুজাউদ্দিন (১৭২৫-১৭৩৯) , সরফরাজ খান (১৭৩৯-১৭৪০) , আলিবর্দি খান (১৭৪০-১৭৫৬) , এবং সিরাজউদ্দৌলা (১৭৫৬-১৭৫৭) ।
উল্লেখ্য যে ১৭০৪-০৫ সাল পর্যন্ত সুবেদার এবং দেওয়ান দুটি আলাদা পদ এবং আলাদা দায়িত্ব ছিলো । ঐ সময় সুবেদার ছিলেন আজিম উসসান এবং দেওয়ান ছিলেন মুর্শিদকুলি খান । উভয়ের বিবাদের ফলে দেওয়ান তাঁর রাজস্ব দপ্তর ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত করেন । পরে ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদারির দায়িত্বও মুর্শিদকুলি খানের উপর দেওয়া হয় । সুবেদার এবং দেওয়ান দুটি পদ মুর্শিদকুলি খাঁন পেলে তিনি নিজেকে "নবাব" বলে ঘোষনা করেন । এনারা সকলেই """মসনদ - ই - সুবে বাংলা""" ব্যবহার করেছেন অথবা এই মসনদের উপর বসেছেন । এছাড়াও বৃটিশরা দেওয়ানি লাভের পর নবাব নাজিমুদ্দৌলা থেকে নবাব হুমায়ুন জা পর্যন্ত ইনারা সকলেই এই মসনদ ব্যবহার করেছেন । এখন এই """মসনদ - ই - সুবে বাংলা""" কোলকাতার ভিক্টোরীয়া মেমোরিয়াল হলে স্ব যত্নে রাখা আছে ।



ধূপ ঘড়ি বা সূর্য ঘড়ি ............... স্থান : হাজারদুয়ারি প্রাসাদ । শহর : মুর্শিদাবাদ ( লালবাগ ) । থানা : মুর্শিদাবাদ। জেলা : মুর্শিদাবাদ।












💥 সময়ের স্রোতে ভগ্নপ্রায় সময় নির্ধারণ যন্ত্র .........

💥 দিন যায় রাত্রি আসে , সপ্তাহান্তে মাস আসে। এভাবেই বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়ে চলে। এভাবেই কতো যুগের পর যুগ পেরিয়ে যায় তার হিসেব হয়তো ক্যালেন্ডারের পাতাতেই পাওয়া সম্ভব । সময় , দিন, বছর, ও যুগের হিসাব রাখা আজকের যুগে সহজ হলেও চিরকাল কিন্তু এমন ছিল না । আজকে আমরা যাকে ঘড়ি হিসেবে চিনি বা জানি তার বিবর্তন কিন্তু হয়ে চলেছে যুগে যুগে। এমনই এক সময় নির্ধারণ যন্ত্র বা ঘড়িই হলো সূর্য ঘড়ি বা ধূপ ঘড়ি । ঊনবিংশ শতকে যে এই ঘড়ির প্রচলন ছিল আমাদের মুর্শিদাবাদের বুকে তার কিছু কিছু প্রমাণ আজও দেখতে পাওয়া যায়। একটি গোলাকার স্তম্ভের উপরে একটি ধাতব দণ্ডের সাহায্যে সূর্যের আলোর ছায়ার মাধ্যমে সময়, দিন , মাস নির্ধারণ করা হতো। বিখ্যাত হাজারদুয়ারি প্রাসাদের সামান্য দক্ষিণে অবস্থিত এমনই এক সূর্য ঘড়ি অতীত ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আজও সগর্বে দাড়িয়ে আছে।

✍ লেখা ও 📷 ছবি : অনিন্দ্য সরকার। 


Monday, 11 March 2019

💢 প্রাচীন প্রস্তরখণ্ড ......... গ্রাম : সাউন্দি । থানা : খড়গ্রাম । জেলা : মুর্শিদাবাদ ।


👉 ইতিহাস এমন একটি বিষয় যা দেখে ও পড়তে গিয়ে  ছাত্র জীবনে বিরক্তির উদ্রেক হয়েছে এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অজস্র । কিন্তু সেই ইতিহাসকেই গল্পের আকারে পরিবেশন করলে  সত্যিই যেন রোমাঞ্চকর মনে হয় । আমাদের এই পৃথিবী অথবা দেশ বা রাজ্য বা জেলা,  প্রত্যেকেরই একটি নিজস্ব নবীন  ও প্রাচীন ইতিহাস আছে । তবুও আমরা অপেক্ষাকৃত নবীন ইতিহাসকেই অধিক প্রাধান্য দিয়ে এসেছি চিরকাল । তার কারণ হয়তো নবীন ইতিহাস অনুসন্ধান অপেক্ষাকৃত সহজসাধ্য । অসংখ্য স্থাপত্য নিদর্শন ও বিভিন্ন স্থানের নামের দ্বারা এই নবীন ইতিহাস তার নিজের কথা মনে করায় প্রতিনিয়ত । তবে তথাকথিত প্রাচীন ইতিহাসও বিভিন্ন স্থানের নামের মাধ্যমে জীবিত আছে কোথাও কোথাও । কালের বিবর্তনে সেই সমস্ত নামের কিছুটা পরিবর্তনও হয়ে থাকতে পারে । এমনই একটি গ্রামের সন্ধান পাওয়া গেল মুর্শিদাবাদ জেলার খড়গ্রাম থানা এলাকায় , যে গ্রামের নাম ও সেখানে প্রাপ্ত প্রত্ন সামগ্রী সত্যিই যেন বিস্ময়ের উদ্রেক করে । উক্ত গ্রামের নাম “ সাউন্দি “ । হয়তো “ সেন দিঘী “ থেকে “ সাউন দিঘী “ , তারপর  “ সাউন ডিহি “ , তারপর  Saundi “ সাউন্দি “ । অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে ।  তার কারন এই গ্রামেরই দক্ষিণ- পূর্ব  প্রান্তে একটি গাছের নিচে একটি অতি প্রাচীন পাথরের অংশ দেখতে পাওয়া যায় ।  সামান্য কারুকার্য খচিত  সেই প্রাচীন পাথরের আকার ও গড়ন দেখে অনুমান করা যায় যে সেটি কোনো গৃহের প্রবেশদ্বারের পাথরের চৌকাঠের উপরের অংশ । ওড়িষার প্রাচীন মন্দির গুলির চৌকাঠের সাথে তার কিছুটা  মিল পাওয়া যায় । তাহলে কি সেটি কোনো প্রাচীন মন্দিরের চৌকাঠের অংশ  ?  যেটি  অবস্থিত ছিল সাউন্দি গ্রামে  ?  আর একটি প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে  ,  যে এই “ সাউন্দি “ গ্রামই কি প্রাচীন  “ সেন দিঘী “ গ্রাম  , যা সেন রাজত্বকালে তৈরি হয়েছিল  ? প্রশ্ন  অনেক  কিন্তু  এর উত্তর খোঁজা ও মরুভূমিতে জল খুঁজে পাওয়া সমান ।

সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অনুসন্ধান  ।
✍ লেখা ও 📷 ছবি : অনিন্দ্য সরকার ।

চন্দনবাটি শিবমন্দির বা পাল যুগের প্রাচীন শিবলিঙ্গ, চন্দনবাটি, সাগরদীঘি, মুর্শিদাবাদ।








👉 ঐতিহাসিক এই জেলার ভাগীরথী নদীর পশ্চিম পাড়ের ভূখণ্ড অনেক প্রাচীন, যা রাঢ় অঞ্চল নামে পরিচিত এবং পূর্ব পাড়ের ভূখণ্ড, বাগরি অঞ্চল নামে পরিচিত যা তুলনায় অনেক নবীন। অতীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নৃপতির বিজিত রাজ্যের রাজধানী হবার সুবাদে অসংখ্য স্থাপত্য গড়ে উঠেছিল এই জেলায়। সেই সকল অতি প্রাচীন স্থাপত্য অধিক সমৃদ্ধ করেছে এই রাঢ় অঞ্চলকে। মৌর্য, গুপ্ত, সেন, পাল ইত্যাদি রাজাদের রাজত্বকালে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপত্য আজকে কালের গর্ভে। আবার ক্ষীণ হলেও কিছু স্থাপত্য আজও অতীত গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মুর্শিদাবাদ জেলার সাগর দীঘির কাছে চন্দনবাটিতে অবস্থিত চন্দনবাটি শিব মন্দির আজও সেই গর্বিত অতীত অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মন্দিরটি তুলনায় নবীন হলেও অধিষ্ঠিত শিবলিঙ্গটি অনেক প্রাচীন। সম্ভবত পাল আমলের। পাল ও সেন আমলে চন্দনবাটি শিব মন্দির সংলগ্ন এই অঞ্চলটি মৃত্যুঞ্জয়পুর নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই প্রাচীন ইতিহাস মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। বিষয়টি সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আসে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। বাংলা ১৩৩৪ সাল নাগাদ প্রাচীন এই মৃত্যুঞ্জয়পুর, জিয়াগঞ্জের নেহালিয়া রাজবংশের উত্তর পুরুষ সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহের জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময় এই জেলার প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক পুরাসম্পদ সংগ্রহে সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই সুত্রে রায়বাহাদুর সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ তার বন্ধু আজিমগঞ্জ নিবাসী জমিদার নির্মল কুমার সিংহ নওলক্ষাকে চন্দনবাটি সংলগ্ন এই অঞ্চলে খননের কাজ করবার অনুরোধ করেন । জমিদার নির্মল কুমার সিংহ নওলক্ষা স্ব শরীরে উক্ত খননকার্য পরিচালনা করেন। এই খননের ফলে নব কলেবরে উদ্ভাসিত হয় এক প্রাচীন ইতিহাস। ১৩৩৫ সালে খনন কার্য শেষ হলে পাওয়া যায় অসংখ্য প্রত্ন সামগ্রী, একটি বিশালাকার শিবলিঙ্গ ও পাল আমলের প্রাচীন একটি শিব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। প্রায় ১২ ফুট মাটির নিচে পাওয়া উক্ত শিব লিঙ্গের উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট। খনন কার্যের ফলে সৃষ্ট সেই গর্তে গজিয়ে উঠা আগাছার ভেতরে এখনও প্রাচীন মন্দিরের ভিত্তিভূমির ছোটো বাংলা ইঁটের গাঁথুনি চোখে পড়ে। নোনাধরা সেই ইঁটের ফাঁকে হয়তো অসংখ্য না-জানা ইতিহাস আজও লুকিয়ে আছে। অসংখ্য ঘটনাবহুল অধ্যায়ের সাক্ষী হয়েও যেন ভীষণ নিরবতা। ১৩৬০ বঙ্গাব্দে কালুরাম রামচাঁদ রঘুনাথ সাদানী নামে একজন জনৈক ব্যবসায়ী এই উৎখননের এলাকায় ১০ বিঘা জমি নিয়ে একটি মন্দির নির্মাণ করেন এবং সেবাইত হিসেবে মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন । মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে পাল আমলের প্রাচীন শিব লিঙ্গটিকে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। উক্ত ব্যবসায়ী স্বদেশ ত্যাগ করে এখন হয়েছেন কান্দি নিবাসী। মন্দিরের জমি ও পুজোর গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে নবগঠিত ট্রাস্টি বোর্ড। বর্তমানে নিত্য পূজা অর্চনার পাশাপাশি শিব পুর্নিমা উপলক্ষে ভক্ত সমাগম উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে যা অতীত গৌরব পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

✍লেখা ও 📷 ছবি : অনিন্দ্য সরকার (Anindya Sarka)     




Saturday, 9 March 2019

রহস্যময় ঘর ........... মুর্শিদাবাদের ঐতিহাসিক মোতিঝিলে অবস্থিত । থানা + জেলা : মুর্শিদাবাদ ।





👉 মোতিঝিলের কালা মসজিদের পাশে একটা ঘর আছে, যার কোনও দরজা বা জানালা নেই । চারদিকে দেওয়াল আর ছাদটাও ঢাকা । স্থানীয় এলাকার লোককাহিনী অনুসারে নবাব সিরাজ এক ফৈজীর ওপর রেগে গিয়ে তাঁকে মাঝখানে রেখে এই ঘর তৈরি করান কিন্তু এই ঘটনার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না । অনেকে মনে করতেন এই ঘরটি ছিল ঘসেটি বেগমের কোষাগার, তাই ঘরে অনেক মণিমুক্তোও আছে । কিন্তু এর আশ্চর্য শক্ত ইঁটের গাঁথনি কেউ কোনও ভাবে ভাঙতে পারেনি । পরবর্তীকালে কোনও একজন সাহেব এই ঘরের দেওয়াল কামানের গোলা দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন এবং সেইদিন রাতেই সাহেব মারা যান । তারপর থেকে এই ঘরের দেওয়াল ভাঙার চেষ্টা আর কেউ কখনও করেনি । দেওয়ালে কামানের আঘাতের চিহ্ন আজও স্পষ্ট দেখা যায় ।

আকবরী মসজিদ নির্মাণের রোমাঞ্চকর কাহিনী ............ থানা : রাজমহল । জেলা : সাহেবগঞ্জ । রাজ্য : ঝাড়খণ্ড ।




 ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাহেবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রাজমহল একটি প্রাচীন জনপদ বা ঐতিহাসিক শহর । এই শহরে অনেক অমূল্য ঐতিহ্যময় স্থাপত্য যেমন বর্শার মিষ্টি শীতল জলে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন লতা গুল্ম ও চির সবুজ উদ্ভিদের পাতার আড়ালে আজকে যেন শীতের চাদরে মুখ লুকিয়েছে তেমনই অনেক ঐতিহ্যময় স্থাপত্য সরকারি অথবা বিভিন্ন সংস্থার অর্থানুকূল্যে আজকের এই শীতের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে যেন সদা হাস্য । বড়ই অভিমান যে তার , আর হবে নাই বা কেন ? অতীত স্মৃতি যে তার সত্যিই গর্বের। কিন্তু আজকের Five generation এর যুগের মানুষ , কে বা শুনতে চায় তার গর্বের কথা । মাঝে মাঝে অবশ্যই আমাদের মতো ইতিহাস প্রেমি মানুষ , মনের মাঝে হাজারো রহস্যে ভরা প্রশ্ন নিয়ে ধূমকেতুর মতো হাজির হয়ে যায় তাদের দুয়ারে। এমনই একটি স্থাপত্য দেখেই প্রথমে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। নাম তার আকবরী মসজিদ । উত্তরে প্রবহমান গঙ্গা ও দক্ষিণে রাজমহল-তালঝারী সড়ক, তাকে যেন পরম যত্নে ও স্নেহ মমতায় লালন করে চলেছে। এই মসজিদের অজানা কাহিনীর কৌতূহল নিবারণে , টাইম মেশিনে সওয়ারি হয়ে আমার মন যেন তখন ছুটে চলেছে অতীতে । কোনো বাধায় যেন সে তখন মনতে নারাজ । সময়টা তখন ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি । সম্রাট আকবর তখন ভারতবর্ষের মাটিতে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃড় করতে ব্যস্ত এবং এই সময় বাংলায় বারোভুঁইয়াদের অস্তিত্ব খুব ভালো ভাবেই টের পাচ্ছেন সম্রাট । এই বারোভুঁইয়াদের নাগপাশ থেকে বাংলাকে উদ্ধার করে মোগল সাম্রাজ্য ভুক্ত করতে সম্রাট, বীর রাজপুত সেনাপতি মান সিংহকে বাংলার সুবেদার করে পাঠান । মান সিংহ ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় পদার্পণ করে আগমহল নামক একটি জনপদে তার রাজধানী স্থাপন করেন । অতঃপর রাজপুত সেনাপতি রাজধানী আগমহলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরন করেন " রাজমহল " । বাংলার প্রাচীন রাজধানী গৌড়ের ধ্বংসের পর নতুন রাজধানী রাজমহলের দীপশিখার আলোকে চারিদিক যেন আলোকিত হয়ে উঠল । প্রাচীন আগমহল যেন রাজমহলের আড়ালে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করলো । প্রশাসনিক প্রয়োজনে গড়ে উঠল অসংখ্য ইমারত । বাংলার প্রায় সর্বময় কর্তা মান সিংহ ঠিক এই সময় নিজের জন্য একটি প্রাসাদোপম বাড়ি ও মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করলেন । সেই মতো প্ল্যান , এস্টিমেট সবই হল এবং এই প্রাসাদের জন্য হাদাফ নামে একটি উঁচু জায়গাও নির্বাচন করা হল । সবই ঠিকঠাক চলছিলো এবং কাজও শুরু হলো কিন্তু গোল বাধলো একটি জায়গায় । তখন ফতেহজঙ্গ নামে বিহারের একজন শাসনকর্তা রাজমহলে বসবাস করতেন । এই ফতেহজঙ্গ সম্রাট আকবরকে পত্র দ্বারা জানিয়ে দেন যে আপনার সেনাপতি মান সিংহ রাজমহলে একটি মন্দির নির্মাণ করে কাফের ধর্ম প্রচার ও নিজ প্রাসাদ বানিয়ে সেটিকে প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত করে নিজে স্বাধীন ও সতন্ত্র শাসক হবার পরিকল্পনা করছেন । কথায় আছে যে দেওয়ালেরও নাকি কান আছে ....! স্বাভাবিকভাবেই এই নালিশ এর খবরও মান সিংহের কানে পৌঁছে গেল খুব তারাতারি । সম্রাটের ক্রোধাগ্নি থেকে বাঁচতে তিনি কি করবেন ঠিক করে উঠতে পারছেন না , এমতাবস্থায় তিনি রাজধানী রাজমহলের নাম পরিবর্তন করা মনস্থির করলেন এবং সম্রাটকে খুশি করতে নতুন নামকরণ করলেন আকবর নগর । এছাড়াও নিজের প্রাসাদ ও মন্দির নির্মাণের কাজ মাঝ পথে বন্ধ করে সেটিকে একটি প্রকাণ্ড জুম্মা মসজিদে রূপান্তরিত করলেন । এর মধ্যেই সেনাপতি মানসিংহ খবর পেলেন যে সম্রাট রাজমহল সফরে আসছেন । এই খবর সেনাপতি মান সিংহের কাছে যেন শিরে সংক্রান্তি হয়ে দেখা দিল । সম্রাট সয়ং যখন রাজমহলে আসছেন তখন তার উপাসনার জন্য মসজিদের প্রয়োজন । বিতর্কিত জুম্মা মসজিদ হয়তো আছে কিন্তু প্রাত্যহিক উপাসনার জন্য আর একটি স্বতন্ত্র মসজিদের প্রয়োজন অনুভব করে, দ্রুত প্ল্যান এস্টিমেট সেরে সেনাপতি মান সিংহ শুরু করলেন নতুন মসজিদ তৈরির কাজ এবং সময় মতো শেষও করলেন সেই মসজিদ নির্মাণের কাজ । অবশেষে সম্রাটকে খুশি করতেই নাম দিলেন আকবরী মসজিদ । অতঃপর সম্রাট রাজমহলে অবস্থান কালে প্রায় দুই মাস এই আকবরী মসজিদে নিজ উপাসনা সম্পূর্ণ করেছিলেন । এরপর নিকটস্থ গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে যায় । কালের ধারায় ও মানুষের প্রয়োজনে এই মসজিদ ব্যবহৃত হতে শুরু করে দাতব্য ঔষধালয় হিসেবে প্রায় ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত । পরবর্তীতে উক্ত ঔষধালয় অন্য একটি নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করে ব্রিটিশ রেলওয়ে কোম্পানি  এবং এই আকবরী মসজিদ স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দেয় ।

তথ্যসূত্র : সাঁওতাল পরগনা গেজেটিয়ার , মুর্শিদাবাদ কাহিনী ও কিছুটা কল্পনার আশ্রয়ে ।

✍ লেখা ও 📷 ছবি : অনিন্দ্য সরকার। 


জনৈক ইউসুফ্ বাবুর বাড়ি ............. বেলডাঙা রেল স্টেশনের কাছে অবস্থিত। থানা : বেলডাঙা । জেলা : মুর্শিদাবাদ ।





☞☞ প্রাচীন এই মুর্শিদাবাদ জেলার মাটিতে যেন ইতিহাসের গন্ধ মিশে আছে । সেই গৌড়ের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ , পাল যুগ , সেন যুগ , নবাবী আমল তারপর ব্রিটিশ রাজত্বের কতো গুপ্ত হত্যা , স্বরযন্ত্র , যুদ্ধ এবং গৌরবের কাহিনী এই জেলার মাটিতে চাপা পরে আছে । কতো স্থাপত্য , মন্দির , মসজিদ , স্মৃতিস্তম্ভ , প্রাসাদ নির্মিত হয়েছে তার সঠিক হিসেব করা সত্যিই কঠিন । অনেক স্থাপত্য,  কালের  নিয়মে আজ নিশ্চিহ্ন । অতীত সময়ের গৌরবময় শিল্পকলার প্রমাণ নিয়ে আজও অনেক স্থাপত্য টিকে রয়েছে । বেলডাঙা রেল স্টেশন সংলগ্ন ইউসুফ্ বাবুর বাড়িও এর ব্যতিক্রম নয় । স্থানীয় মানুষের কাছে শোনা যায় যে , জনৈক ইউসুফ্ বাবু কিছুদিন ইংল্যান্ডে বসবাস করেছেন । ইংল্যান্ডে বসবাস করার ফলে ব্রিটিশ স্থাপত্য তাঁকে প্রভাবিত করে । এর ফলে ব্রিটিশ স্থাপত্যের অনুকরণে তিনি এই বাড়ি নির্মাণ করেন , বাংলা ১৩২৯ সালে । যদিও স্থানীয় মানুষের কাছে এই বিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই । স্থানীয় মানুষেরা তাঁকে " ইউসুফ্ ঠিকাদার " নামে চেনেন । বর্তমানে এই বাড়ি ওয়াকফ এস্টেটের কার্যালয় ।  

✍ লেখা ও 📷 ছবি : অনিন্দ্য সরকার।