Search This Blog ( এই ব্লগটি অনুসন্ধান করুন )

Saturday, 9 March 2019

আকবরী মসজিদ নির্মাণের রোমাঞ্চকর কাহিনী ............ থানা : রাজমহল । জেলা : সাহেবগঞ্জ । রাজ্য : ঝাড়খণ্ড ।




 ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাহেবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রাজমহল একটি প্রাচীন জনপদ বা ঐতিহাসিক শহর । এই শহরে অনেক অমূল্য ঐতিহ্যময় স্থাপত্য যেমন বর্শার মিষ্টি শীতল জলে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন লতা গুল্ম ও চির সবুজ উদ্ভিদের পাতার আড়ালে আজকে যেন শীতের চাদরে মুখ লুকিয়েছে তেমনই অনেক ঐতিহ্যময় স্থাপত্য সরকারি অথবা বিভিন্ন সংস্থার অর্থানুকূল্যে আজকের এই শীতের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে যেন সদা হাস্য । বড়ই অভিমান যে তার , আর হবে নাই বা কেন ? অতীত স্মৃতি যে তার সত্যিই গর্বের। কিন্তু আজকের Five generation এর যুগের মানুষ , কে বা শুনতে চায় তার গর্বের কথা । মাঝে মাঝে অবশ্যই আমাদের মতো ইতিহাস প্রেমি মানুষ , মনের মাঝে হাজারো রহস্যে ভরা প্রশ্ন নিয়ে ধূমকেতুর মতো হাজির হয়ে যায় তাদের দুয়ারে। এমনই একটি স্থাপত্য দেখেই প্রথমে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। নাম তার আকবরী মসজিদ । উত্তরে প্রবহমান গঙ্গা ও দক্ষিণে রাজমহল-তালঝারী সড়ক, তাকে যেন পরম যত্নে ও স্নেহ মমতায় লালন করে চলেছে। এই মসজিদের অজানা কাহিনীর কৌতূহল নিবারণে , টাইম মেশিনে সওয়ারি হয়ে আমার মন যেন তখন ছুটে চলেছে অতীতে । কোনো বাধায় যেন সে তখন মনতে নারাজ । সময়টা তখন ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি । সম্রাট আকবর তখন ভারতবর্ষের মাটিতে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃড় করতে ব্যস্ত এবং এই সময় বাংলায় বারোভুঁইয়াদের অস্তিত্ব খুব ভালো ভাবেই টের পাচ্ছেন সম্রাট । এই বারোভুঁইয়াদের নাগপাশ থেকে বাংলাকে উদ্ধার করে মোগল সাম্রাজ্য ভুক্ত করতে সম্রাট, বীর রাজপুত সেনাপতি মান সিংহকে বাংলার সুবেদার করে পাঠান । মান সিংহ ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় পদার্পণ করে আগমহল নামক একটি জনপদে তার রাজধানী স্থাপন করেন । অতঃপর রাজপুত সেনাপতি রাজধানী আগমহলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরন করেন " রাজমহল " । বাংলার প্রাচীন রাজধানী গৌড়ের ধ্বংসের পর নতুন রাজধানী রাজমহলের দীপশিখার আলোকে চারিদিক যেন আলোকিত হয়ে উঠল । প্রাচীন আগমহল যেন রাজমহলের আড়ালে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করলো । প্রশাসনিক প্রয়োজনে গড়ে উঠল অসংখ্য ইমারত । বাংলার প্রায় সর্বময় কর্তা মান সিংহ ঠিক এই সময় নিজের জন্য একটি প্রাসাদোপম বাড়ি ও মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করলেন । সেই মতো প্ল্যান , এস্টিমেট সবই হল এবং এই প্রাসাদের জন্য হাদাফ নামে একটি উঁচু জায়গাও নির্বাচন করা হল । সবই ঠিকঠাক চলছিলো এবং কাজও শুরু হলো কিন্তু গোল বাধলো একটি জায়গায় । তখন ফতেহজঙ্গ নামে বিহারের একজন শাসনকর্তা রাজমহলে বসবাস করতেন । এই ফতেহজঙ্গ সম্রাট আকবরকে পত্র দ্বারা জানিয়ে দেন যে আপনার সেনাপতি মান সিংহ রাজমহলে একটি মন্দির নির্মাণ করে কাফের ধর্ম প্রচার ও নিজ প্রাসাদ বানিয়ে সেটিকে প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত করে নিজে স্বাধীন ও সতন্ত্র শাসক হবার পরিকল্পনা করছেন । কথায় আছে যে দেওয়ালেরও নাকি কান আছে ....! স্বাভাবিকভাবেই এই নালিশ এর খবরও মান সিংহের কানে পৌঁছে গেল খুব তারাতারি । সম্রাটের ক্রোধাগ্নি থেকে বাঁচতে তিনি কি করবেন ঠিক করে উঠতে পারছেন না , এমতাবস্থায় তিনি রাজধানী রাজমহলের নাম পরিবর্তন করা মনস্থির করলেন এবং সম্রাটকে খুশি করতে নতুন নামকরণ করলেন আকবর নগর । এছাড়াও নিজের প্রাসাদ ও মন্দির নির্মাণের কাজ মাঝ পথে বন্ধ করে সেটিকে একটি প্রকাণ্ড জুম্মা মসজিদে রূপান্তরিত করলেন । এর মধ্যেই সেনাপতি মানসিংহ খবর পেলেন যে সম্রাট রাজমহল সফরে আসছেন । এই খবর সেনাপতি মান সিংহের কাছে যেন শিরে সংক্রান্তি হয়ে দেখা দিল । সম্রাট সয়ং যখন রাজমহলে আসছেন তখন তার উপাসনার জন্য মসজিদের প্রয়োজন । বিতর্কিত জুম্মা মসজিদ হয়তো আছে কিন্তু প্রাত্যহিক উপাসনার জন্য আর একটি স্বতন্ত্র মসজিদের প্রয়োজন অনুভব করে, দ্রুত প্ল্যান এস্টিমেট সেরে সেনাপতি মান সিংহ শুরু করলেন নতুন মসজিদ তৈরির কাজ এবং সময় মতো শেষও করলেন সেই মসজিদ নির্মাণের কাজ । অবশেষে সম্রাটকে খুশি করতেই নাম দিলেন আকবরী মসজিদ । অতঃপর সম্রাট রাজমহলে অবস্থান কালে প্রায় দুই মাস এই আকবরী মসজিদে নিজ উপাসনা সম্পূর্ণ করেছিলেন । এরপর নিকটস্থ গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে যায় । কালের ধারায় ও মানুষের প্রয়োজনে এই মসজিদ ব্যবহৃত হতে শুরু করে দাতব্য ঔষধালয় হিসেবে প্রায় ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত । পরবর্তীতে উক্ত ঔষধালয় অন্য একটি নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করে ব্রিটিশ রেলওয়ে কোম্পানি  এবং এই আকবরী মসজিদ স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দেয় ।

তথ্যসূত্র : সাঁওতাল পরগনা গেজেটিয়ার , মুর্শিদাবাদ কাহিনী ও কিছুটা কল্পনার আশ্রয়ে ।

✍ লেখা ও 📷 ছবি : অনিন্দ্য সরকার। 


No comments: