Search This Blog ( এই ব্লগটি অনুসন্ধান করুন )

Wednesday 20 February 2019

পাটিকাবাড়ি কুঠি .......... গ্রাম : পাটিকাবাড়ি । থানা : নওদা । জেলা : মুর্শিদাবাদ ।


☞☞ জনৈক হৃষিকেশ লাহা ছিলেন মেদিনীপুর জমিদারি কোম্পানির মালিক । তাদের বাড়ি ছিল মেদিনীপুর । তাদের জমিদারি দুভাগে বিভক্ত ছিল । দক্ষিণ জোনের সদর ছিল গোদাপিয়াশাল আর উত্তর জোনের সদর শিকারপুর কুঠি । এরা ছিলেন মুর্শিদাবাদ নবাবের আশ্রিত পত্তনীদার । এদের ব্যবসা ছিল স্বদেশে ও বিদেশে । দেশের ব্যবসা ছিল গোলদারী । উত্তরাংশে নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের বৃহদংশে তাদের জমিদারি ছিল । পলিমাটি দ্বারা গঠিত এই এলাকা । এই এলাকা নীল চাষের পক্ষে উপযুক্ত বিবেচিত হওয়ায় ইংরেজ নীলকর সাহেবগণ নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের ব্যাপক অংশে নীল চাষ শুরু করে । এজন্য তারা চাষীদের দাদন দিত এবং জোর করে নীল চাষ করাতো । কেউ চাষ করতে অস্বীকার করলে অমানুষিত অত্যাচার করত । এই নীল বস্ত্রশিল্পের কাজে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হতো । ফলে এটা ছিল ব্যাপক আয়ের পথ । সুতরাং কিছু অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজ কর্মচারী এবং ইংরেজ যুবক , বাংলা ও বিহারে একাজ শুরু করে জমিদারদের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত নিয়ে । " এন্ড্রু ইউল এন্ড কোং " হৃষিকেশ লাহার কাছে নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকার এজেন্সী নেয় মূলত নীল চাষের জন্য । এরা এই এলাকায় নদীয়ার মেহেরপুর , আমঝুপি ( বর্তমানে বাংলাদেশে ) , রাজশাহীর বিলবাড়িয়া ( বর্তমানে বাংলাদেশে ) , মুর্শিদাবাদের ডোমকল , সুজাপুর ভগবানগোলার খড়িবোনা , পাটিকাবাড়ি ও নদীয়ার শিকারপুরে কুঠি স্থাপন করে । 

Saturday 16 February 2019

ইতিহাসের অনেক চাপা দীর্ঘশ্বাস বুকে নিয়ে আজও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে এই ভাষ্করদহ ......... গ্রাম : মানকরা। থানা : বহরমপুর। জেলা : মুর্শিদাবাদ।

💢বহরমপুর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে ৩৪  নং জাতীয় সড়কের পাশে মানকরা গ্রাম। মানকরা    রেলগেটের সামান্য দক্ষিণ - পশ্চিমে এই ভাষ্করদহ      অবস্থিত। সে অনেক আগের কথা। সময়টা প্রায় ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ই মে । খুঁর্শিদাবাদ শহরের ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে ডাহাপাড়া। বর্গী নেতা ভাষ্কর পণ্ডিত সেখনে উপস্থিত । ডাহাপাড়া বাজার পুড়িয়ে দিয়ে ভাগীরথী নদী পেরিয়ে পূর্ব পাড়ে রাজধানী শহরে ঢুকে পড়ে বর্গীরা ৷ সারাদিন ধরে লুঠতরাজ চলে রাজধানী মুর্শিদাবাদে । মহিমাপুরে জগৎশেঠদের গদী থেকে দু কোটি টাকা লুঠ করে । আলিবর্দী আসার আগেই তারা পালিয়ে যায় । অবস্থাপন্ন ধনী পরিবারের মানুষেরা রাজধানী মুর্শিদাবাদে থাকতে বিপন্ন বোধ করতে লাগলো । বিশেষ করে যাদের হারানাের ভয় বেশি , বর্গীদের লক্ষ্য রাজধানী শহরের সেই ধনী ব্যাক্তিরা । তাই শহর মুর্শিদাবাদ ছেড়ে মফস্বল কলকাতাই তাদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠলো । অজগ্রাম কলকাতা শহরে পরিণত হওয়ার সুযোপ পেল বর্গীদর সৌজন্যে । অতঃপর বর্গী দমনের জন্য আলিবর্দী দিল্লির সাহায্য প্ৰার্থনা করলেন । সম্রাট তখন সফদরজঙ্গকে দায়িত্ব দিলেন বিহার রক্ষার । চতুর সফদরজঙ্গ প্ৰচার করে দিলেন সম্রাট তাঁকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সুবেদারির সনদ দিয়েছেন । আলিবর্দী বুঝলেন অবস্থা সুবিধার নয় । দূত দ্বারা চিঠি পাঠালেন নবাব । জানালেন বর্গী দমনে আমার সৈন্যবলই যথেষ্ট, আপনার সাহায্যের প্রয়োজন নেই । ও দিকে সম্রাটের ডাকে সাড়া দিয়ে পেশোয়া বালাজী রাও বিহারের উদেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন । খবর পেয়ে সফদরজঙ্গ পিছু হটতে শুরু করলেন … । কারণ তাঁর সঙ্গে বালাজি রাওয়ের সম্পর্ক “অহিনকুলে’ । সফদরজঙ্গের থেকে আলিবর্দী রক্ষা পেলেন । পুনরায় নতুন সমস্যা উপস্থিত হলো নবাবের কাছে । বাংলা হয়ে উঠলো দুই পরস্পর বিরোধী মারাঠা শক্তির রণাঙ্গন । একদিকে পেশোয়া বালাজী রাও অন্যদিকে রঘুজী ভোঁসলে । আলিবর্দী হাত মেলালেন পেশোয়া বালাজী রাওয়ের সঙ্গে দাউদপুরে । ১৭৪৩, ৩১ মার্চ , আলিবর্দী বার্ষিক চৌথ আর সৈন্য বাহিনীর খরচ বাবদ ২২ লক্ষ টাকা দিলেন । পেলেন বালাজীর বন্ধুত্ব । প্রতিশ্রুতি দিলেন বালাজি রাও যে বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যা থেকে বর্গী নেতা রঘুজী ভৌসলেকে উংখাত করে ছাড়বেন। আলিবর্দি খাঁ ও বালাজী রাও যৌথ ভাবে আক্রমণ শুরু করলেন রঘুজীকে । রঘুজী তখন দাই হাটের কাছাকাছি ৷ যৌথ আক্রমণের খবর পেয়ে বীরভূমের দিকে পালিয়ে গেলেন রঘুজী । মারাঠা বাহিনীর গতি আলিবর্দীর বাহিনীর থেকে অনেক বেশি ছিল , বালাজী রাও তাই বাধ্য হয়েই আলিবর্দীকে জানান রঘুজীকে ধরতে গেলে আমার একক বাহিনী নিয়ে তাড়া করতে হবে । আলিবর্দী বালাজীর প্রস্তাব মেনে নিলেন । কাটোয়ায় ফিরে এলেন নবাব । বালাজী ধাওয়া করলেন রঘুজীকে, কিছুদিন পর বালাজী দূত মারফত নবাবকে সংবাদ দিলেন যে ওড়িষার সম্বলপুরের দিকে চলে গিয়েছেন রঘুজী । হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন আলিবর্দি । বালাজী রাও দেশে ফিরতে না ফিরতেই রঘুজী মেদিনীপুরে পৌঁছে দূত দ্বারা চৌথ দাবি করলেন । 
দীর্ঘদিন যুদ্ধে ব্যস্ত নবাব আলিবর্দি আর পেরে উঠছিলেন না । সৈন্যরা রণ ক্লান্ত। সেনাপতিরাও চাইছিলেন বিশ্রাম। লড়াই করে বর্গীদের প্রতিহত করা সম্ভব নয়, আলিবর্দি এটা বুঝতে পেরেছিলেন। ফাঁদ পেতে শিকার ধরতে হবে। ভাষ্কর পণ্ডিতকে বন্দী করার পরিকল্পনা করে দূত পাঠালেন তাঁর কছে। দূত জানালো আপনারা চান চৌথ আর নবাব চান শান্তি। আপনারা দুজনে মিলে বসে সন্ধি করে নিন । ভাষ্কর পণ্ডিত এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি আলিভাইকে পাঠালেন, সন্ধির ব্যপারে কথা বলতে নবাবের সঙ্গে। নবাব আলিভাইকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। মিষ্টি কথা ও সুন্দর সুন্দর উপহারে তার মন ভরিয়ে দিলেন । নবাব তাঁদের সকলকে ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে মানকরায় আসতে 
নিমন্ত্রণ করলেন। বললেন সন্ধির কথা সবাই মিলে বসে হবে । আপনাদের সব শর্তই আমি মানব , আমার দাবি শুধু বাংলায় শান্তি বিরাজ করুক। বিষয়টি আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য নবাব তাঁর প্রধান সেনাপতি মুস্তাফা খাঁ ও দেওয়ান জানকীরামকে ভাষ্কর পণ্ডিতের শিবিরে পাঠালেন। ভাষ্কর পণ্ডিত তখন ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে দিগনগর শিবিরে ছিল। দিগনগর হচ্ছে কাটোয়া ও বর্ধমানের মধ্যবর্তী এক যায়গা । তাঁরা দুজন ভাষ্কর পণ্ডিতের শিবিরে গিয়ে কোরাণ ও গঙ্গাজল-তুলসী ছুঁয়ে শপথ নিয়ে কথা দিয়ে এলেন যে মারাঠাদের সঙ্গে বিশ্বাসহীনতার কোনো কাজ হবে না। 
ভাষ্কর পণ্ডিত তাঁর ২২ জন সেনাপতিদের নিয়ে আলোচনায় বসলেন । ২১ জন সেনাপতি সন্ধির পক্ষে মত দিলেন । একমাত্র রঘুজী গাইকোয়াড সন্ধির পক্ষে ছিলেন না । সংখ্যাগরিষ্ঠের মত নিয়ে ভাষ্কর ২২ জন সেনাপতি ও ১০ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য সহ ভাগীরথী পার হয়ে পলাশীতে এসে তাঁবু ফেললেন। দিনটা ছিল ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ শে মার্চ । পলাশী থেকে ভাষ্কর পণ্ডিত মানকরায় এলেন । ১০ হাজার অশ্বারোহী সৈন্যের দায়িত্ব রঘুজী গাইকোয়াডের উপর দিয়ে ২১ জন সেনাপতি সহ ভাষ্কর , আলিবর্দির শিবিরে প্রবেশ করলেন। শিবির থেকে বেশ কিছু দূরে মাঠের মধ্যে খানে তাঁর সৈন্যদের অবস্থান। আলিবর্দি বড়ো বড়ো তাবু খাটিয়ে হাতি , ঘোড়া , উঁট ইত্যাদি নানারকম দামী সামগ্রী রঙিন পতাকা দিয়ে এমন সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছেন যে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা একটা মরণফাঁদ । ভাষ্কর পণ্ডিতরা যে তাবুতে প্রবেশ করেছিল সেটা ছিল ডবল পর্দা দেওয়া তাবু। দুই পর্দার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল আলিবর্দির বাছাই করা ঘাতক বাহিনী । হাতে তাদের ধারালো মারাত্মক সব অস্ত্রশস্ত্র। তাবুর ভিতরে ঢুকে বা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে ওখানে সৈন্যদের অবস্থান রয়েছে। ভাষ্কর পণ্ডিতরা যে শিবিরে ঢুকেছিল সেটা ছিল দরবার শিবির । আকারে ছিল বিরাট। নবাবের আদেশে ভাষ্কর পণ্ডিতরা দরবার শিবিরে প্রবেশ করার পর কাপড়ের ভারী দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। নবাব পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা তাঁর সেনাপতিদের আদেশ দিলেন যে এবার তোমরা তোমাদের কাজ শুরু করো , এক জনও যেন বাদ না পড়ে । এই বলে তিনি তাবু থেকে বেড়িয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে তাঁর সেনাপতি এসে খবর দিলেন যে নবাবের হুকুম পালন হয়েছে। নবাবের নির্দেশে বাকি তাবু থেকে অসংখ্য সৈন্য বের হয়ে তাড়া করলো দূরে মাঠের মধ্যে দাড়িয়ে থাকা মারাঠা সৈন্যদের। রঘুজী গাইকোয়াড যেন এর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। আগেই বুঝতে পেরেছিলেন আলিবর্দির চাল । তাই সন্ধির পক্ষে মত দেয়নি। নবাব সৈন্যদের তাড়া খেয়ে তীর গতিতে ১০ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন রঘুজী গাইকোয়াড। নবাব বাহিনী তাঁর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারলেন না। অতঃপর নবাব আলিবর্দি খানের নির্দেশে ভাষ্কর পণ্ডিত সহ ২১ জন মারাঠা সেনাপতির মৃতদেহ নিকটস্থ একটি জলাশয় বা দহতে ফেলে দেওয়া হয়। অখ্যাত একটি জলাশয় ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিল। এই ভাষ্কর পণ্ডিতের নামেই নামকরণ হয়ে গেল ভাষ্করদহ নামে । ইতিহাসের অসংখ্য স্মৃতি ও ভাষ্কর পণ্ডিত সহ ২১ জন সেনাপতির করুণ আর্তনাদের জ্বলন্ত স্বাক্ষী হয়ে আজও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে এই ভাষ্করদহ। 

তথ্যসূত্র : মুর্শিদাবাদ থেকে পলাশী ও মহারাষ্ট্র পুরাণ।
















Friday 15 February 2019

ঐশ্বর্যশালী এক জলাশয় মধুগড় ....... 🕳পরেশনাথ স্মৃতি মন্দির ক্লাবের নিকট অবস্থিত। 🕳ধনপতি বাবু লেন । পোস্ট : কাশিমবাজার রাজ । জেলা : মুর্শিদাবাদ ।

সে অনেক আগের কথা , মোগল রাজপুত্র সাহজাহান প্রিয়তমা মুমতাজকে সাথে নিয়ে কিছুদিনের জন্য প্রমোদ ভ্রমণে বাংলা সুবার হুগলীতে এসে উঠেছেন। যুবরাজের ঢিলেঢালা সুরক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে পর্তুগিজরা হঠাৎ আক্রমণ করে বসে এবং বেগমের পরিচারিকাদের অপহরণ করে নিয়ে যায় ,এমনকি সাহজাহান ও মমতাজ কোনো রকমে রক্ষা পান। ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে সাহজাহান দিল্লির সিংহাসনে বসেই এই অপমানের বদলা নিতে বদ্ধপরিকর হন এবং ১৬৩০খ্রিস্টাব্দে দেশের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা পূর্বতন বাংলার সুবেদার কাশিম খাঁ কে পর্তুগিজ দমনে পাঠান। কাশিম খাঁ হুগলি থেকে পর্তুগিজদের বিতাড়িত করে তাদের বেশ কিছু শ্বেতাঙ্গিনিকে ধরে নিয়ে এসে “ মাসুমাবাজার “ নামক একটি জনপদে রাখেন ও বাকিদের ভেট হিসাবে সম্রাটের কাছে প্রেরণ করেন । অতঃপর তিনি অল্প কিছু দিন এই মাসুমাবাজারে থেকে যান এবং তার নামানুসারেই মাসুমাবাজার হয়ে যায় জগদ্বিখ্যাত কাশিমবাজার। এরপর গঙ্গা বা বর্তমান কাটিগঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে । মোগল সাম্রাজ্যের পতনের সুযোগে আঞ্চলিক শক্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে । মুর্শিদাবাদ নিজ মস্তকে ধারণ করেছে বাংলা সুবার রাজধানীর মুকুট । দেশ বিদেশের মানুষ নিজ নিজ ভাগ্য অন্বেষণে এসেছেন এই মুর্শিদাবাদে । অনেকে এসে উঠেছেন জগদ্বিখ্যাত বন্দর নগরী এই কাশিমবাজারে । যেমন ফরাসডাঙ্গায় এসে উঠেছিলেন ফরাসিরা , কালিকাপুরে এসে উঠেছিলেন ওলন্দাজরা , সৈয়দাবাদে এসে উঠেছিলেন আরমেনিয়ানরা ও শ্রীপুর প্রাসাদের কাছাকাছি কোনো জায়গায় ছিল ব্রিটিশদের কুঠি । বিদেশি বণিকদের মতো ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশীয় বণিকগনও নিজ নিজ ভাগ্য অন্বেষণে এসে উঠেছিলেন এই কাশিমবাজারে । জৈন সম্প্রদায়ের মহাজনগন যেখানে এসে উঠেছিলেন সেই জায়গাটি আজও মহাজনটুলি নামে পরিচিত । জৈন সম্প্রদায় ছাড়াও ভারতবর্ষের অন্যান্য সম্প্রদায়ও বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেন ও বানিজ্য করতে থাকেন । স্বপ্নপুরীর মতো গড়ে উঠতে শুরু করে এই মহাজনটুলি । এখানে বসবাসকারী অধিবাসীগন নিজ নিজ নিত্যপ্রয়োজনীয় জলের চাহিদার প্রায় বৃহদংশই মেটাতে থাকেন এই গঙ্গা ( কাটিগঙ্গা ) থেকেই । এছাড়াও প্রয়োজনীয় জলের কিছু অংশ সংলগ্ন একটি পুকুর থেকে মেটানো হতো । উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত উক্ত পুকুরই হলো সেই বিখ্যাত মধুগড়ে বা মধুগড়। তখন অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় । বাংলা , বিহার ও ওড়িষার সর্বময় কর্তা তখন নবাব আলিবর্দি খান । মহারাষ্ট্রের মারাঠাদের আক্রমণে নবাব তখন ব্যস্ত এবং কোনো মতেই তিনি এর সুরাহা করতে পারছেন না । সারা বাংলা লুটপাট চালিয়ে মারাঠাগন একদিন মুর্শিদাবাদের উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত । এই সংবাদ যেন তড়িত্ গতিতে ছড়িয়ে পড়ল মুর্শিদাবাদের আনাচে কানাচে। মুর্শিদাবাদ শহরের ন্যায় বন্দর শহর কাশিমবাজারও আতঙ্কিত হয়ে পড়ল । এমতাবস্থায় মহাজনটুলির মহাজনগন নিজ নিজ ধনসম্পত্তি চিহ্নিত করে এই মধুগড়ের জলে লুকিয়ে রেখে এখান থেকে পালিয়ে গেলেন। সম্ভবত মারাঠাদের হাত থেকে নিজ নিজ সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্য বলেই মনে হয়। মারাঠাগন এখান থেকে ফিরে যাবার পরে মহাজনগন পুনরায় নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে আসেন কিন্তু ধনসম্পত্তি সম্পূর্ণ ফিরে পেতে অসমর্থ হন । এর কারণ ছিল সেখানকার জলের গভীরতা । তখন থেকে আজ পর্যন্ত এইরকম প্রবাদ প্রচলিত আছে এই স্থানীয় এলাকায় যে , যক্ষদেব নাকি সেই সমস্ত ধনসম্পত্তি নিজে পাহারা দিয়ে চলেছেন আজও । সেইসময় অপূর্ব কারুকার্য মণ্ডিত অতি সুন্দর ছিল এই মধুগড়ের পাড় , কিন্তু বর্তমানে তার বিন্দুমাত্র চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না । সবই সময়ের নির্মম পরিহাস । চিরকাল কারও কি সমান যায় কখনও ........? দিন যায় মাস আসে , মাস যায় বছর আসে , এইভাবে শতাব্দী পার হয়ে যায় । বর্তমান হয়ে যায় অতীত ইতিহাস । সেইরকমই এক অতীত গৌরবের স্মৃতি বুকে নিয়ে কি আর্তনাদ করে চলেছে এই মধুগড়ে ....?

💻তথ্য সংগ্রহ, ✍লেখা ও 📷 ছবি : অনিন্দ্য সরকার ।

মীর মদন, নোয়ে সিং হাজারি ও বাহাদুর আলী খানের স্মৃতি বিজড়িত পলাশীর সৌধ :

💢 এই সেই ঐতিহাসিক স্থান , নাম তার পলাশী । ঐতিহাসিক এই পলাশী বর্তমানে মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী , নদীয়ার একটি গ্রাম মাত্র । ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে জুন এখানেই ঘটে গিয়েছিল সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ । না , ঠিক যুদ্ধ নয় । এ যেন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা । সেই খেলায় দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন নবাবের প্রধান সেনাপতি মীরজাফর , রায়দুর্লভ ও আরও কয়েকজন । সেই প্রহসনের যুদ্ধে নবাবের বিশ্বস্তও ছিলেন কয়েকজন এবং তারা হলেন , গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান মীর মদন, সেনাপতি মোহনলাল , বন্দুক বাহিনীর কমান্ডার বাহাদুর আলি খান, গোলন্দাজ বাহিনীর অধিনায়ক নোয়ে সিং হাজারি ও আরও অনেকে । নবাব সিরাজউদ্দৌলার নেতৃত্বে এই বিশ্বস্ত বাহিনী যে স্থান থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন, সেই স্থানে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে Nadia District Citizens Council এর পক্ষ থেকে ১৯৭২ - ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ।


Thursday 14 February 2019

মীরণের সমাধি :

👉 বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন ইতিহাস প্রসিদ্ধ জায়গা গুলোর গৌরবময় কাহিনী বরাবরই আমাদের মনকে নাড়া দেয় । বাংলার নবাবি আমলের ইতিহাসে প্রায় অনেকটা অংশ জুড়েই রয়েছে ভালোবাসা , লালসা , বিশ্বাসঘাতকতা ও রণণ্মত্ব যুদ্ধের ঝনঝনানি । ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে অজস্র প্রাচীন কাহিনী, তার কতটুকু কাল্পনিক বা কতটুকু সত্য সে কথা ইতিহাসবিদরাই বলতে পারবেন। এমনই এক ইতিহাসের পাতায় খুঁজে পেলাম বাংলার এক রাজপুত্রের কথা। ইতিহাসের পাতায় তিনি চিরকালই বিশ্বাসঘাতকের পুত্র হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে এসেছেন। ইতিহাস খ্যাত সেই রাজপুত্রই হলেন মীরজাফর পুত্র মীর সাদেক আলি খান, যিনি মীর মীরণ নামেই সমধিক পরিচিত। রহস্যময় তাঁর মৃত্যু কাহিনীর মতই তাঁর সমাধি যেন আজও রহস্যের চাদরে ঢাকা আছে প্রাচীন বাংলার রাজধানী রাজমহলের বুকে। রহস্য রহস্য গন্ধ থাকলে মন যেন ছুটে যেতে চায় সেই অতীতের সময়কালে । আমার মন যেন তখন রহস্যের স্বাদ নিতে সওয়ার হয়েছে কাল্পনিক টাইম মেশিনে । গন্তব্য সেই রোমাঞ্চকর অষ্টাদশ শতাব্দী। কল্পনার দেশে, যেন ফুটে উঠল পলাশীর যুদ্ধের পরবর্তী সেই রোমহর্ষক দিনগুলোর কথা। সময়টা ছিল ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে জুন। ব্রিটিশ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ সৈন্য বাহিনী নিয়ে এসে উঠেছেন মুর্শিদাবাদ শহরের কাছাকাছি মাদাপুরে , এমন সময় জগতশেঠ পত্র দ্বারা ক্লাইভকে জানালেন যে এখন মুর্শিদাবাদ শহরে প্রবেশ করলে আপনার প্রাণ সংশয় হতে পারে কারন মীরজাফর পুত্র মীরণ সৈন্য বাহিনী নিয়ে শহরের প্রবেশদ্বারে আপনার গতিরোধ করবার জন্য দাড়িয়ে আছেন । এই খবর খুব দ্রুততার সাথে মীরজাফরের কাছে পৌছে গেলে মীরজাফর বিচলিত হয়ে পড়লেন এবং প্রতিরোধ তুলে নেওয়ার জন্য মীরণকে আদেশ দিলেন। এই আদেশে মীরণ কর্ণপাত না করায় মীরজাফর ছুটে গেলেন স্ত্রী শাহ্ খানুমের কাছে এবং ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য পুনঃ পুনঃ অনুরোধ করতে থাকলেন । বেগম শাহ্ খানুম নিজ পুত্রের অনিষ্টের কথা চিন্তা করে তাড়াতাড়ি তাকে পত্র দ্বারা ডেকে পাঠালেন এবং পত্রে লিখলেন, যে তিনি যদি ফিরে না আসেন তবে তার মা অন্তঃপুর ছেড়ে সেখানে হাজির হবেন । মায়ের অনুরোধে মিরণ ফিরে আসেন প্রাসাদে এবং এরপরে ব্রিটিশরা রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে শহরে প্রবেশ করেন। এদিকে খবর রটে গেল যে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ধরা পড়েছেন রাজমহলে। ১৭৫৭ খ্রীস্টাব্দের ৩০ শে জুন অথবা অন্য মতে ১লা জুলাই সিরাজউদ্দৌলাকে মুর্শিদাবাদে আনা হলো । ততক্ষনে সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে মীরজাফর হীরাঝিল প্রাসাদের মসনদে আসীন হয়েছেন এবং বিচারের জন্য সিরাজউদ্দৌলাকে হীরাঝিল প্রাসাদ এর দরবারে নিয়ে যাওয়া হলো। সিরাজউদ্দৌলা কাতর স্বরে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানালেন মীরজাফর এর কাছে কিন্তু মীরজাফর ও দরবারে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এই ব্যাপারে মতামত দিতে অসমর্থ হলেন এবং এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে বলে মীরণের নেতৃত্বে সিরাজউদ্দৌলাকে কারাগারে প্রেরণ করলেন । কাল বিলম্ব না করে মসনদের ভবিষ্যত্ উত্তরাধিকারী মীরণ তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছকে ফেললেন । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের দুসরা জুলাই গভীর রাত্রে মিরনের নির্দেশে মোহাম্মদী বেগ সিরাজউদ্দৌলা কে হত্যা করলেন। এরপরে মসনদের উত্তরাধিকারীর পথ নিষ্কণ্টক করতে মীরণ একে একে হত্যা করলেন সিরাজউদ্দৌলা ছোট ভাই মির্জা মেহেদী ও আরো অনেককে । এছাড়াও নবাব আলীবর্দী খানের পরিবারের মহিলা সদস্যদের গ্রেফতার করে ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে পাঠিয়ে দেওয়া হল। নবাব পরিবারের মহিলাদের ভাগ্যে অমাবস্যার অন্ধকার নেমে এলো । এরপর নিকটস্থ ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেল। মীরণ ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদের সেনাধ্যক্ষ কে বারবার আদেশ দিতে থাকলেন নবাব পরিবারের মহিলাদের হত্যা করার জন্য কিন্তু তিনি এই কাজ করতে অস্বীকার করলে মীরণ নিজেই তাদের হত্যা করার পরিকল্পনা করে ফেললেন। অবশেষে নবাব পরিবারের মহিলাদের মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে আনার নাম করে নৌকায় চাপানো হল এবং বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবিয়ে ঘষেটি বেগম ও আমিনা বেগম কে হত্যা করা হলো। অবশ্য ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপে বেগম লুৎফুন্নিসা , শরফুন্নিসা ও রাজকন্যা উম্মে জোহরা রক্ষা পেলেন। এর মধ্যেই নবাব সৈন্য যুবরাজ মীরণের নেতৃত্বে ও ব্রিটিশ সৈন্য ব্রিটিশ সেনাপতি কোল্ড এর নেতৃত্বে যৌথভাবে রাজমহলের কাছাকাছি আজিমাবাদে ( বর্তমান পাটনা ) যুদ্ধে গিয়েছেন দিল্লির বাদশাহ শাহ আলম ও পূর্নিয়ার শাসক খাদেম হোসেনের যৌথ বাহিনীর মোকাবিলা করতে । সৈন্য সংখ্যা কম থাকায় ব্রিটিশ সেনাধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন নক্স এর নেতৃত্বে একটি সৈন্য বাহিনী, রাজমহলের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করতে বাধ্য হন নবাব মীর জাফর। ক্যাপ্টেন নক্স খুব দ্রুততার সাথে রাজমহলে পৌছালে সম্রাট শাহ আলমের যৌথ বাহিনী পশ্চাদগমন করতে বাধ্য হন। এমতাবস্থায় আজিমাবাদে অবস্থানকালে ১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দের ২ রা জুলাই রাত্রে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সৈন্যবাহিনী তাবুতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ভাবি নবাব মীরণ তার বড় তাবুতে আশ্রয় নেন এবং ঝড়ের তীব্রতা এতটাই ছিল যে মীরণের বড় তাঁবু ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এরপর মীরণ বাধ্য হয়ে অপেক্ষাকৃত একটু ছোট তাবুতে আশ্রয় নেন এবং ঘটে যায় সেই অলৌকিক কান্ড । প্রচন্ড আওয়াজের সাথে মীরণের তাঁবুতে বজ্রপাত হয় এবং এই বজ্রপাতেই মীরণের মৃত্যু হয় । অনেকে অবশ্য মনে করেন ব্রিটিশরাই মীরণকে হত্যা করেছিল। তার মধ্যে স্বাধীনতার চিন্তা বলবতী হওয়ায় ব্রিটিশদের চক্রান্তেই তাকে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিল। এছাড়াও মীরণের শরীরের গুলির চিহ্ন নবাব মীরজাফরের কাছে গোপন রাখতেই মৃতদেহ মুর্শিদাবাদে না নিয়ে এসে রাজমহলে সমাধিস্থ করা হয়। যাই হোক সকাল হলে খুব দ্রুততার সাথে মীরণের মৃতদেহ গঙ্গা পার করে রাজমহলে সমাধি দেওয়া হয়। এই রোমাঞ্চকর কাহিনীতে আমি যেন সত্যিই হারিয়ে গিয়েছিলাম। সম্বিত্ ফিরতেই মনে এলো মীরণের সমাধির বর্তমান করুণ অবস্থার কথা । মন যেন কোন মতেই আর এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সাথে ঘটে চলা অবহেলার সাথে মিত্রতায় রাজি নয়। রাজমহল বাস স্টপ থেকে পশ্চিম দিকে সোজা এক রাস্তা গিয়েছে তালঝারী পর্যন্ত । এই রাস্তাতেই রাজমহল বাস স্টপ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে মহাজনটুলির গোশালা নামক জায়গায় রাস্তার দক্ষিণ দিকে এক আমবাগানের মধ্যে সেই রাজপুত্রের সমাধি চোখে পড়ে । সমাধি দেখেই যেন চমকে উঠতে হয় । একি ....... ? রাজপুত্রের সমাধি জঙ্গলে আবৃত ......? বিধাতার কি নির্মম পরিহাস, একদিন এই রাজপুত্রের রোষানলে পড়ে প্রাণ হারাতে হয়েছিল নবাব আলিবর্দি খানের পরিবারের অনেককেই আর আজকে তিনিই বিধাতার রোষানলে । পূর্বে আমবাগান সম্বলিত এই সমাধি ক্ষেত্রটি পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে প্রাচীর দ্বারা ঘেরা ছিল যার এখন কোন চিহ্নই নেই, এমনকি সমাধিতে কোন প্রস্তর ফলকও নেই । যিনি একসময় দেশের ভবিষ্যৎ নিজের হাতে লিখতে চেয়েছিলেন আজ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার সমাধিই খুজে পায়না। সত্যিই এ এক করুণ পরিণতি । এ যেন বিষাদে একান্তে গুমরে গুমরে কেঁদে চলেছেন এক বিশ্বাসঘাতকের অন্তজ ........ ।

💢 জুম্মা মসজিদ নির্মাণের রোমাঞ্চকর কাহিনী ............... শহর + থানা : রাজমহল । জেলা : সাহেবগঞ্জ । রাজ্য : ঝাড়খণ্ড । Jumma Mosque City : Rajmahal. District : Sahebganj. State : Jharkhand.

 👉 সময়টা ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি । সম্রাট আকবর তখন ভারতবর্ষের মাটিতে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃড় করতে ব্যস্ত এবং এই সময় বাংলায় বারোভুঁইয়াদের অস্তিত্ব খুব ভালো ভাবেই টের পাচ্ছেন সম্রাট । এই বারোভুঁইয়াদের নাগপাশ থেকে বাংলাকে উদ্ধার করে মোগল সাম্রাজ্য ভুক্ত করতে সম্রাট, বীর রাজপুত সেনাপতি মান সিংহকে বাংলার সুবেদার করে পাঠান । মান সিংহ ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় পদার্পণ করে আগমহল নামক একটি জনপদে তার রাজধানী স্থাপন করেন । অতঃপর রাজপুত সেনাপতি রাজধানী আগমহলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরন করেন " রাজমহল " । বাংলার প্রাচীন রাজধানী গৌড়ের ধ্বংসের পর নতুন রাজধানী রাজমহলের দীপশিখার আলোকে চারিদিক যেন আলোকিত হয়ে উঠল । প্রাচীন আগমহল যেন রাজমহলের আড়ালে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করলো । প্রশাসনিক প্রয়োজনে গড়ে উঠল অসংখ্য ইমারত । বাংলার প্রায় সর্বময় কর্তা মান সিংহ ঠিক এই সময় নিজের জন্য একটি প্রাসাদোপম বাড়ি ও মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করলেন । সেই মতো প্ল্যান , এস্টিমেট সবই হল এবং এই প্রাসাদের জন্য হাদাফ নামে একটি উঁচু জায়গাও নির্বাচন করা হল । সবই ঠিকঠাক চলছিলো এবং কাজও শুরু হলো কিন্তু গোল বাধলো একটি জায়গায় । তখন ফতেহজঙ্গ নামে বিহারের একজন শাসনকর্তা রাজমহলে বসবাস করতেন । এই ফতেহজঙ্গ সম্রাট আকবরকে পত্র দ্বারা জানিয়ে দেন যে আপনার সেনাপতি মান সিংহ রাজমহলে একটি মন্দির নির্মাণ করে কাফের ধর্ম প্রচার ও নিজ প্রাসাদ বানিয়ে সেটিকে প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত করে নিজে স্বাধীন ও সতন্ত্র শাসক হবার পরিকল্পনা করছেন । কথায় আছে যে দেওয়ালেরও নাকি কান আছে ....! স্বাভাবিকভাবেই এই নালিশ এর খবরও মান সিংহের কানে পৌঁছে গেল খুব তারাতারি । সম্রাটের ক্রোধাগ্নি থেকে বাঁচতে তিনি কি করবেন ঠিক করে উঠতে পারছেন না , এমতাবস্থায় তিনি রাজধানী রাজমহলের নাম পরিবর্তন করা মনস্থির করলেন এবং সম্রাটকে খুশি করতে নতুন নামকরণ করলেন আকবর নগর । এছাড়াও নিজের প্রাসাদ ও মন্দির নির্মাণের কাজ মাঝ পথে বন্ধ করে সেটিকে একটি প্রকাণ্ড জুম্মা মসজিদে রূপান্তরিত করলেন । সেনাপতি মান সিংহ কিন্তু এখানেই থেমে থাকেন নি । ফতেহজঙ্গের প্রতি তার প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে । অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ । সেনাপতি মান সিংহ তার বাড়ি থেকে ফতেহজঙ্গের বাড়ি পর্যন্ত সুরঙ্গ খনন করালেন এবং তাতে বারুদ পূর্ণ করে ফতেহজঙ্গের বাড়ি উড়িয়ে দিলেন । লেখা : অনিন্দ্য সরকার ( Anindya Sarkar )

Armenian church, Saidabad, Berhampore, Murshidabad.

Armenian church, Saidabad, Berhampore.