Search This Blog ( এই ব্লগটি অনুসন্ধান করুন )

Friday, 15 February 2019

ঐশ্বর্যশালী এক জলাশয় মধুগড় ....... 🕳পরেশনাথ স্মৃতি মন্দির ক্লাবের নিকট অবস্থিত। 🕳ধনপতি বাবু লেন । পোস্ট : কাশিমবাজার রাজ । জেলা : মুর্শিদাবাদ ।

সে অনেক আগের কথা , মোগল রাজপুত্র সাহজাহান প্রিয়তমা মুমতাজকে সাথে নিয়ে কিছুদিনের জন্য প্রমোদ ভ্রমণে বাংলা সুবার হুগলীতে এসে উঠেছেন। যুবরাজের ঢিলেঢালা সুরক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে পর্তুগিজরা হঠাৎ আক্রমণ করে বসে এবং বেগমের পরিচারিকাদের অপহরণ করে নিয়ে যায় ,এমনকি সাহজাহান ও মমতাজ কোনো রকমে রক্ষা পান। ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে সাহজাহান দিল্লির সিংহাসনে বসেই এই অপমানের বদলা নিতে বদ্ধপরিকর হন এবং ১৬৩০খ্রিস্টাব্দে দেশের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা পূর্বতন বাংলার সুবেদার কাশিম খাঁ কে পর্তুগিজ দমনে পাঠান। কাশিম খাঁ হুগলি থেকে পর্তুগিজদের বিতাড়িত করে তাদের বেশ কিছু শ্বেতাঙ্গিনিকে ধরে নিয়ে এসে “ মাসুমাবাজার “ নামক একটি জনপদে রাখেন ও বাকিদের ভেট হিসাবে সম্রাটের কাছে প্রেরণ করেন । অতঃপর তিনি অল্প কিছু দিন এই মাসুমাবাজারে থেকে যান এবং তার নামানুসারেই মাসুমাবাজার হয়ে যায় জগদ্বিখ্যাত কাশিমবাজার। এরপর গঙ্গা বা বর্তমান কাটিগঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে । মোগল সাম্রাজ্যের পতনের সুযোগে আঞ্চলিক শক্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে । মুর্শিদাবাদ নিজ মস্তকে ধারণ করেছে বাংলা সুবার রাজধানীর মুকুট । দেশ বিদেশের মানুষ নিজ নিজ ভাগ্য অন্বেষণে এসেছেন এই মুর্শিদাবাদে । অনেকে এসে উঠেছেন জগদ্বিখ্যাত বন্দর নগরী এই কাশিমবাজারে । যেমন ফরাসডাঙ্গায় এসে উঠেছিলেন ফরাসিরা , কালিকাপুরে এসে উঠেছিলেন ওলন্দাজরা , সৈয়দাবাদে এসে উঠেছিলেন আরমেনিয়ানরা ও শ্রীপুর প্রাসাদের কাছাকাছি কোনো জায়গায় ছিল ব্রিটিশদের কুঠি । বিদেশি বণিকদের মতো ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশীয় বণিকগনও নিজ নিজ ভাগ্য অন্বেষণে এসে উঠেছিলেন এই কাশিমবাজারে । জৈন সম্প্রদায়ের মহাজনগন যেখানে এসে উঠেছিলেন সেই জায়গাটি আজও মহাজনটুলি নামে পরিচিত । জৈন সম্প্রদায় ছাড়াও ভারতবর্ষের অন্যান্য সম্প্রদায়ও বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেন ও বানিজ্য করতে থাকেন । স্বপ্নপুরীর মতো গড়ে উঠতে শুরু করে এই মহাজনটুলি । এখানে বসবাসকারী অধিবাসীগন নিজ নিজ নিত্যপ্রয়োজনীয় জলের চাহিদার প্রায় বৃহদংশই মেটাতে থাকেন এই গঙ্গা ( কাটিগঙ্গা ) থেকেই । এছাড়াও প্রয়োজনীয় জলের কিছু অংশ সংলগ্ন একটি পুকুর থেকে মেটানো হতো । উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত উক্ত পুকুরই হলো সেই বিখ্যাত মধুগড়ে বা মধুগড়। তখন অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় । বাংলা , বিহার ও ওড়িষার সর্বময় কর্তা তখন নবাব আলিবর্দি খান । মহারাষ্ট্রের মারাঠাদের আক্রমণে নবাব তখন ব্যস্ত এবং কোনো মতেই তিনি এর সুরাহা করতে পারছেন না । সারা বাংলা লুটপাট চালিয়ে মারাঠাগন একদিন মুর্শিদাবাদের উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত । এই সংবাদ যেন তড়িত্ গতিতে ছড়িয়ে পড়ল মুর্শিদাবাদের আনাচে কানাচে। মুর্শিদাবাদ শহরের ন্যায় বন্দর শহর কাশিমবাজারও আতঙ্কিত হয়ে পড়ল । এমতাবস্থায় মহাজনটুলির মহাজনগন নিজ নিজ ধনসম্পত্তি চিহ্নিত করে এই মধুগড়ের জলে লুকিয়ে রেখে এখান থেকে পালিয়ে গেলেন। সম্ভবত মারাঠাদের হাত থেকে নিজ নিজ সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্য বলেই মনে হয়। মারাঠাগন এখান থেকে ফিরে যাবার পরে মহাজনগন পুনরায় নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে আসেন কিন্তু ধনসম্পত্তি সম্পূর্ণ ফিরে পেতে অসমর্থ হন । এর কারণ ছিল সেখানকার জলের গভীরতা । তখন থেকে আজ পর্যন্ত এইরকম প্রবাদ প্রচলিত আছে এই স্থানীয় এলাকায় যে , যক্ষদেব নাকি সেই সমস্ত ধনসম্পত্তি নিজে পাহারা দিয়ে চলেছেন আজও । সেইসময় অপূর্ব কারুকার্য মণ্ডিত অতি সুন্দর ছিল এই মধুগড়ের পাড় , কিন্তু বর্তমানে তার বিন্দুমাত্র চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না । সবই সময়ের নির্মম পরিহাস । চিরকাল কারও কি সমান যায় কখনও ........? দিন যায় মাস আসে , মাস যায় বছর আসে , এইভাবে শতাব্দী পার হয়ে যায় । বর্তমান হয়ে যায় অতীত ইতিহাস । সেইরকমই এক অতীত গৌরবের স্মৃতি বুকে নিয়ে কি আর্তনাদ করে চলেছে এই মধুগড়ে ....?

💻তথ্য সংগ্রহ, ✍লেখা ও 📷 ছবি : অনিন্দ্য সরকার ।

No comments: