
👉 সময়টা ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি । সম্রাট আকবর তখন ভারতবর্ষের মাটিতে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃড় করতে ব্যস্ত এবং এই সময় বাংলায় বারোভুঁইয়াদের অস্তিত্ব খুব ভালো ভাবেই টের পাচ্ছেন সম্রাট । এই বারোভুঁইয়াদের নাগপাশ থেকে বাংলাকে উদ্ধার করে মোগল সাম্রাজ্য ভুক্ত করতে সম্রাট, বীর রাজপুত সেনাপতি মান সিংহকে বাংলার সুবেদার করে পাঠান । মান সিংহ ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় পদার্পণ করে আগমহল নামক একটি জনপদে তার রাজধানী স্থাপন করেন । অতঃপর রাজপুত সেনাপতি রাজধানী আগমহলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরন করেন " রাজমহল " । বাংলার প্রাচীন রাজধানী গৌড়ের ধ্বংসের পর নতুন রাজধানী রাজমহলের দীপশিখার আলোকে চারিদিক যেন আলোকিত হয়ে উঠল । প্রাচীন আগমহল যেন রাজমহলের আড়ালে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করলো । প্রশাসনিক প্রয়োজনে গড়ে উঠল অসংখ্য ইমারত । বাংলার প্রায় সর্বময় কর্তা মান সিংহ ঠিক এই সময় নিজের জন্য একটি প্রাসাদোপম বাড়ি ও মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করলেন । সেই মতো প্ল্যান , এস্টিমেট সবই হল এবং এই প্রাসাদের জন্য হাদাফ নামে একটি উঁচু জায়গাও নির্বাচন করা হল । সবই ঠিকঠাক চলছিলো এবং কাজও শুরু হলো কিন্তু গোল বাধলো একটি জায়গায় । তখন ফতেহজঙ্গ নামে বিহারের একজন শাসনকর্তা রাজমহলে বসবাস করতেন । এই ফতেহজঙ্গ সম্রাট আকবরকে পত্র দ্বারা জানিয়ে দেন যে আপনার সেনাপতি মান সিংহ রাজমহলে একটি মন্দির নির্মাণ করে কাফের ধর্ম প্রচার ও নিজ প্রাসাদ বানিয়ে সেটিকে প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত করে নিজে স্বাধীন ও সতন্ত্র শাসক হবার পরিকল্পনা করছেন । কথায় আছে যে দেওয়ালেরও নাকি কান আছে ....! স্বাভাবিকভাবেই এই নালিশ এর খবরও মান সিংহের কানে পৌঁছে গেল খুব তারাতারি । সম্রাটের ক্রোধাগ্নি থেকে বাঁচতে তিনি কি করবেন ঠিক করে উঠতে পারছেন না , এমতাবস্থায় তিনি রাজধানী রাজমহলের নাম পরিবর্তন করা মনস্থির করলেন এবং সম্রাটকে খুশি করতে নতুন নামকরণ করলেন আকবর নগর । এছাড়াও নিজের প্রাসাদ ও মন্দির নির্মাণের কাজ মাঝ পথে বন্ধ করে সেটিকে একটি প্রকাণ্ড জুম্মা মসজিদে রূপান্তরিত করলেন । সেনাপতি মান সিংহ কিন্তু এখানেই থেমে থাকেন নি । ফতেহজঙ্গের প্রতি তার প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে । অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ । সেনাপতি মান সিংহ তার বাড়ি থেকে ফতেহজঙ্গের বাড়ি পর্যন্ত সুরঙ্গ খনন করালেন এবং তাতে বারুদ পূর্ণ করে ফতেহজঙ্গের বাড়ি উড়িয়ে দিলেন । লেখা : অনিন্দ্য সরকার ( Anindya Sarkar )
No comments:
Post a Comment