Search This Blog ( এই ব্লগটি অনুসন্ধান করুন )

Thursday 18 April 2019

ঐতিহ্যবাহী দশ শিব মন্দির.......


@ ঐতিহ্যবাহী দশ শিব মন্দির......
কাশিমবাজার।
মুর্শিদাবাদ।

👉 আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে এই মুর্শিদাবাদের মাটিতেই গঙ্গা নদীর একটি অশ্বক্ষুরাকৃতি বাঁকের অংশে এক অখ্যাত নদী বন্দরের পথ চলা শুরু হয়েছিল । অল্পদিনেই নিজ যোগ্যতায় সে ধারণ করে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। সেই কাশিমবাজার বন্দর পরবর্তীতে প্রায় ২০০ বছর ধরে বিশ্বের দরবারে নিজের গৌরবগাঁথা বিঘোষিত করে। ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বণিকগণ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে  তখন পাড়ি জমান এই কাশিমবাজারের উদ্দেশ্যে। একে একে এখানে এসে উপস্থিত হন আর্মেনিয়ান, ডাচ,  ফরাসি ও ব্রিটিশদের মতন  বিদেশী বণিকেরা। আস্তে আস্তে  অসংখ্য দেশীয় বণিকদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই কাশিমবাজার। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পিতৃপুরুষের ভিটে মাটির মায়া ত্যাগ করে, এই জেলার ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত পিরোজপুর গ্রাম ছেড়ে কাশিমবাজারে চলে আসেন জনৈক অযোধ্যারাম রায়। তখন বিশ্বের দরবারে এক জমজমাট বানিজ্য কেন্দ্র হিসেবে কাশিমবাজারের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতছানি তিনি হেলায় অস্বীকার করতে পারেননি। কাশিমবাজার ছোটো রাজবাড়ীর যে পত্তন এই অযোধ্যারাম রায় এর হাতে শুরু হয় তা পরবর্তীতে একসময় উন্নতির চরমে ওঠে। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন  স্থাপত্য গড়ে উঠে এই রাজবাড়ীর বংশধরদের পৃষ্ঠপোষকতায়। কাশিমবাজার ছোটো রাজবাড়ীর সামান্য উত্তরে অবস্থিত দশ শিব মন্দির তেমনই এক স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। তৎকালীন গঙ্গা বা বর্তমান কাটি গঙ্গার পাশেই মন্দিরগুলি নির্মিত হয়েছিল বিভিন্ন সময় এই রাজবাড়ীর বিভিন্ন বংশধরদের দ্বারা। তবে অনেকে মনে করেন ধর্মপরায়ণা রাণী আর্নাকালী দেবীই এই দশ শিব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। অতীতে তিন দিকে প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল এই মন্দির গুচ্ছ, যে প্রাচীরের আজকে কোনো অস্তিত্বই নেই। এই দশ শিব বাড়ির প্রশস্ত অঙ্গনে প্রবেশ করার জন্য পশ্চিমদিকের প্রাচীরে একটি প্রবেশদ্বার আছে। প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করেই বামদিকে অর্থাৎ উত্তরদিকে প্রাচীরের গা ছোঁয়া পূর্ব মুখি দুটি শিব মন্দির চোখে পড়ে। এই প্রথম মন্দিরের ইষ্ট দেবতার নাম “ ভৈরব নাথ “। পূর্ব মুখি উত্তর – দক্ষিণে বিস্তৃত উত্তর দিক থেকে দ্বিতীয় মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ বিশ্বনাথ “। যথাক্রমে পূর্ব মুখি তৃতীয় মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ বৈদ্যনাথ “। পূর্ব মুখি  চতুর্থ মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ সোমনাথ “। পূর্ব মুখি পঞ্চম মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ রামেশ্বর নাথ “।  এছাড়া অঙ্গনের দক্ষিণ দিকে প্রাচীরের প্রায় গা ছোঁয়া পাশাপাশি উত্তর মুখি আরও পাঁচটি মন্দির আছে। এই পাঁচটি মন্দিরের মধ্যে পশ্চিম দিক থেকে উত্তর মুখি প্রথম মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ তারকনাথ “। যযথাক্রমে উত্তর মুখি দ্বিতীয় মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ ত্রম্বকনাথ “। পরবর্তী অর্থাৎ তৃতীয় উত্তর মুখি মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ অমর নাথ “।  চতুর্থ উত্তর মুখি মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ কেদারনাথ “। এই সারির শেষ অর্থাৎ পঞ্চম উত্তর মুখি মন্দিরের ইষ্টদেবতার নাম “ সারনাথ “। এই মন্দির গুলি  সমষ্টিগত ভাবে ইংরেজি  এলফাবেট  (  L )  অক্ষরের সৃষ্টি করেছে। শোনা যায়,  পূর্বে প্রতিদিন পাঁচ পোয়া আতপ চালের অন্নভোগ হত। তার সঙ্গে থাকত দশটি কাঁচা মিষ্টি এবং দশটি পাকা কলা।  কাঁসর ঘন্টা বাজিয়ে সন্ধ্যায় হতো সন্ধ্যারতি। সেকালে দেবতার উদ্দেশ্যে যে ভোগ হতো তাকে বলা হতো  “ দান “। শিবরাত্রির সময় এখানকার স্থানীয় মানুষজন মহাধুমধামে এখনও শিব রাত্রির উৎসব পালন করেন। কাশিমবাজারের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য গুলির মধ্যে এই দশ শিব মন্দির অন্যতম যা সময়ের সাথে যুদ্ধে আজও বিজয়ী.......

লেখা : Anindya Sarkar.

বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসে এই ক্ষুদ্র নিবেদন।

No comments: