👉 " মসনদ - ই - সুবে বাংলা " , যার অর্থ সুবে বাংলার মসনদ বা সিংহাসন । নিকষ কালো পাথরের এই " মসনদ - ই - সুবে বাংলার " জন্মবৃত্তান্ত খোদাই করা আছে তার শরীরে । কেটে কেটে ছয় ফুট ব্যাসের একটি খণ্ডে পরিনত করা নিকষ কালো পাথর । ধারগুলি ষোলোটি পলে ভাগ করা । আঠারো ইঞ্চি উচ্চতার চারটে ভারী স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত এই পাথর ই "মসনদ - ই - সুবে বাংলা" ।
ষোলো পলের এক পলে যা খোদাই করা আছে তার অর্থ এই রকম ------ শুভলক্ষনময় এই মসনদ তৈরী করা হলো বিহারের মুঙ্গেরে , বোখারার দাসানুদাস খাজা নজর কর্তৃক শ্রাবন মাসের ২৭ তারিখ । হিজরি ১০৫২ , মহামান্য বাদশাহ শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র সুলতান শাহসুজা , যিনি সুবে বাংলার সুবেদার ছিলেন , তাঁর আমলে । ধারগুলিতে কয়েকটি গর্ত আছে , উপরে চাঁদোয়া ধরে রাখার জন্য । মসনদের এই চাঁদোয়া ধরে রাখার ইতিহাস আর নবাবদের ভাগ্যের ইতিহাস একই । ১৬৪৩ সাল থেকে শাহসুজা মসনদে আসীন ছিলেন । ১৬৫৭ সালে বাদশাহ শাহজাহান অসুস্থ হয়েছেন রটে গেলে , রাজমহলে এই মসনদে বসেই তাঁর দ্বিতীয় পুত্র শাহসুজা নিজেকে দিল্লির বাদশাহ বলে ঘোষনা করেন । কিন্তু তারপরেই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় । দিল্লিতে আওরঙজেব নিজেকে বাদশাহ ঘোষনা করে বিশাল সেনাবাহিনী সমেত মীর জুমলাকে পাঠান শাহসুজাকে দমন করতে । মীর জুমলা তার পশ্চাদ্ধাবন করেন । শাহসুজা মাসুমা বাজারের কাছে তাঁবু খাটিয়ে বাদশাহি বাহিনীর গতিরোধ করার চেষ্টা করেন । বাদশাহি বাহিনীকে প্রথমে ধুলিয়ানের কাছে দোগাছি , তারপর দেওনাপুর , তারপর সুতি , অবশেষে নশীপুরে নদিপথে বাধা দেন । সব জায়গায় অকৃতকার্য হয়ে তারপর জঙ্গিপুরের উপকণ্ঠে বালিঘাটা নামক জায়গায় সামনাসামনি যুদ্ধে নামেন । যুদ্ধে পরাজিত হয়ে প্রথমে ঢাকা পরে আরাকানে পালিয়ে যান ।
অতঃপর সুবেদার পদে অধিষ্ঠিত হন মীর জুমলা (১৬৬০-১৬৬৩) । মীর জুমলার পরে সুবেদার হন দাউদ খান (১৬৬৩-১৬৬৪) , শায়েস্তা খান (১৬৬৪-১৬৭৮) , ফিদাই খান (১৬৭৮) , আবার শায়েস্তা খান (১৬৭৯-১৬৮৮) , খান-ই-জাহান (১৬৮৮-১৬৮৯) , ইব্রাহিম খান (১৬৮৯-১৬৯৭) , শাহজাদা আজিম উসসান (১৬৯৭-১৭০৪) , মুর্শিদকুলিখান (১৭০৪-১৭২৫) , সুজাউদ্দিন (১৭২৫-১৭৩৯) , সরফরাজ খান (১৭৩৯-১৭৪০) , আলিবর্দি খান (১৭৪০-১৭৫৬) , এবং সিরাজউদ্দৌলা (১৭৫৬-১৭৫৭) ।
উল্লেখ্য যে ১৭০৪-০৫ সাল পর্যন্ত সুবেদার এবং দেওয়ান দুটি আলাদা পদ এবং আলাদা দায়িত্ব ছিলো । ঐ সময় সুবেদার ছিলেন আজিম উসসান এবং দেওয়ান ছিলেন মুর্শিদকুলি খান । উভয়ের বিবাদের ফলে দেওয়ান তাঁর রাজস্ব দপ্তর ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত করেন । পরে ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদারির দায়িত্বও মুর্শিদকুলি খানের উপর দেওয়া হয় । সুবেদার এবং দেওয়ান দুটি পদ মুর্শিদকুলি খাঁন পেলে তিনি নিজেকে "নবাব" বলে ঘোষনা করেন । এনারা সকলেই """মসনদ - ই - সুবে বাংলা""" ব্যবহার করেছেন অথবা এই মসনদের উপর বসেছেন । এছাড়াও বৃটিশরা দেওয়ানি লাভের পর নবাব নাজিমুদ্দৌলা থেকে নবাব হুমায়ুন জা পর্যন্ত ইনারা সকলেই এই মসনদ ব্যবহার করেছেন । এখন এই """মসনদ - ই - সুবে বাংলা""" কোলকাতার ভিক্টোরীয়া মেমোরিয়াল হলে স্ব যত্নে রাখা আছে ।
No comments:
Post a Comment