👉 ঐতিহাসিক এই জেলার ভাগীরথী নদীর পশ্চিম পাড়ের ভূখণ্ড অনেক প্রাচীন, যা রাঢ় অঞ্চল নামে পরিচিত এবং পূর্ব পাড়ের ভূখণ্ড, বাগরি অঞ্চল নামে পরিচিত যা তুলনায় অনেক নবীন। অতীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নৃপতির বিজিত রাজ্যের রাজধানী হবার সুবাদে অসংখ্য স্থাপত্য গড়ে উঠেছিল এই জেলায়। সেই সকল অতি প্রাচীন স্থাপত্য অধিক সমৃদ্ধ করেছে এই রাঢ় অঞ্চলকে। মৌর্য, গুপ্ত, সেন, পাল ইত্যাদি রাজাদের রাজত্বকালে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপত্য আজকে কালের গর্ভে। আবার ক্ষীণ হলেও কিছু স্থাপত্য আজও অতীত গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মুর্শিদাবাদ জেলার সাগর দীঘির কাছে চন্দনবাটিতে অবস্থিত চন্দনবাটি শিব মন্দির আজও সেই গর্বিত অতীত অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মন্দিরটি তুলনায় নবীন হলেও অধিষ্ঠিত শিবলিঙ্গটি অনেক প্রাচীন। সম্ভবত পাল আমলের। পাল ও সেন আমলে চন্দনবাটি শিব মন্দির সংলগ্ন এই অঞ্চলটি মৃত্যুঞ্জয়পুর নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই প্রাচীন ইতিহাস মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। বিষয়টি সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আসে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। বাংলা ১৩৩৪ সাল নাগাদ প্রাচীন এই মৃত্যুঞ্জয়পুর, জিয়াগঞ্জের নেহালিয়া রাজবংশের উত্তর পুরুষ সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহের জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময় এই জেলার প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক পুরাসম্পদ সংগ্রহে সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই সুত্রে রায়বাহাদুর সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ তার বন্ধু আজিমগঞ্জ নিবাসী জমিদার নির্মল কুমার সিংহ নওলক্ষাকে চন্দনবাটি সংলগ্ন এই অঞ্চলে খননের কাজ করবার অনুরোধ করেন । জমিদার নির্মল কুমার সিংহ নওলক্ষা স্ব শরীরে উক্ত খননকার্য পরিচালনা করেন। এই খননের ফলে নব কলেবরে উদ্ভাসিত হয় এক প্রাচীন ইতিহাস। ১৩৩৫ সালে খনন কার্য শেষ হলে পাওয়া যায় অসংখ্য প্রত্ন সামগ্রী, একটি বিশালাকার শিবলিঙ্গ ও পাল আমলের প্রাচীন একটি শিব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। প্রায় ১২ ফুট মাটির নিচে পাওয়া উক্ত শিব লিঙ্গের উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট। খনন কার্যের ফলে সৃষ্ট সেই গর্তে গজিয়ে উঠা আগাছার ভেতরে এখনও প্রাচীন মন্দিরের ভিত্তিভূমির ছোটো বাংলা ইঁটের গাঁথুনি চোখে পড়ে। নোনাধরা সেই ইঁটের ফাঁকে হয়তো অসংখ্য না-জানা ইতিহাস আজও লুকিয়ে আছে। অসংখ্য ঘটনাবহুল অধ্যায়ের সাক্ষী হয়েও যেন ভীষণ নিরবতা। ১৩৬০ বঙ্গাব্দে কালুরাম রামচাঁদ রঘুনাথ সাদানী নামে একজন জনৈক ব্যবসায়ী এই উৎখননের এলাকায় ১০ বিঘা জমি নিয়ে একটি মন্দির নির্মাণ করেন এবং সেবাইত হিসেবে মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন । মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে পাল আমলের প্রাচীন শিব লিঙ্গটিকে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। উক্ত ব্যবসায়ী স্বদেশ ত্যাগ করে এখন হয়েছেন কান্দি নিবাসী। মন্দিরের জমি ও পুজোর গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে নবগঠিত ট্রাস্টি বোর্ড। বর্তমানে নিত্য পূজা অর্চনার পাশাপাশি শিব পুর্নিমা উপলক্ষে ভক্ত সমাগম উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে যা অতীত গৌরব পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
✍লেখা ও 📷 ছবি : অনিন্দ্য সরকার (Anindya Sarka)
2 comments:
Awesome information.
Thanks Anup mondal
Post a Comment